সাকা চৌধুরী যুদ্ধাপরাধী ছিল না বিস্ফোরক মন্তব্যে

চট্টগ্রাম বিএফআরআইয়ের পরিচালকের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৩, ০৭:৫৭ পিএম
চট্টগ্রাম বিএফআরআইয়ের পরিচালকের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত

চট্টগ্রাম বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের(বিএফআর) পরিচালক রফিকুল হায়দারের বিস্ফোরক মন্তব্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শামিমা বেগমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনকল্পে ১৯ জুন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালন করেন। এসময় তদন্ত কমিটি প্রত্যেক পক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করেন এবং লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেন বলে জানা গেছে। 

উল্লেখ্য সম্প্রতি তাঁর একটি ৪৪ সেকেন্ডের অডিওতে শুনা যায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ‘যুদ্ধাপরাধী ছিল না’তার এলাকায় যাও খবর নাও। তার একটাই দোষ হাসিনাকে আঘাত করছে সংসদে দাঁড়িয়ে।এই অডিও ক্লিপ ভাইরালসহ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর সূত্রধরে পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সদস্য সোহরাব হোসাইন বাদী হয়ে গত ১ জুন তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে (ডিএসএ) মামলা করেন। 

অন্যদিকে অডিও ভাইরাল হওয়ায় পরিচালক ক্ষোভ ঝরান সিবিএ নেতা মোঃ মুছার উপর। ক্ষোভে কোন কিছু করতে না পেরে পরিচালকের নির্দেশে মো. জহিরুল আলম বাদী হয়ে সিবিএ নেতা মো. মুছা ও তার দুই ছেলে কলেজে পড়ুয়া মো. তৌহিদ(২১), মো. তৌফিক(২৪)সহ তিন জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন বলে অভিযোগ করেন সিবিএ নেতা। বিএফআরআইয়ের এই পরিচালকের আরো আপত্তিকর মন্তব্যের অডিও পাওয়া গেছে। যেখানে সচিবদেরকে হেয় করা এবং গোপালগঞ্জ জেলার প্রতি প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। 

তিনি শুধুমাত্র বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ না,  তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে মন্ত্রণালয় তদন্ত করেন। তাঁর অনিয়মের একটি ডকুমেন্টে দেখা গেছে, প্রকল্প প্রস্তাবে উনিশটি গবেষণার ব্যয় ১ কোটি ৯৬ লক্ষ ৫০ হাজার। গড়ে প্রতিটি গবেষণার জন্য ব্যয় ১০ লক্ষ ৩৪ হাজার। এর মধ্যে ১৩ টি গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে দেখিয়ে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৯৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। অথচ ৬টি গবেষণা সম্পন্ন হয় নি। যার মূল্য আনুমানিক ৬০ লক্ষ টাকা। মন্ত্রণালায় এই বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি এখনো সঠিক উত্তর দিতে পারেন নাই। এছাড়া তাঁর ঢাকার পূর্বাঞ্চলে প্লট ও  ফ্ল্যাটসহ নামে বেনামে নিয়ম বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরজন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হস্তক্ষেপ কামনা করেন বিএফআরআইয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা ও সিবিএ নেতা। 

বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের(বিএফআর) পরিচালক রফিকুল হায়দার দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে। আমার বলার কিছুই নেই। কোন অভিযোগ সত্য নয় এবং ঢাকার পূর্বাঞ্চলে প্লট ও  ফ্ল্যাট আছে স্বীকার করেন এবং তা সরকারিভাবে পান বলে জানান। নামে বেনামে নিয়ম বহির্ভূত সম্পদ নেই বলে জানান। অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি অবস্থান নেওয়াতে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবী করেন তিনি।তদন্ত কমিটির সদস্য উপসচিব মোঃ আমিরুল কায়ছার দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, সারাদিন সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য শুনেছি এবং লিখিত নিয়েছি। সকলের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে লিখিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পূর্বে কোন কিছু বলা সম্ভব না। 

তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্ত পরিচালক পাশে থাকাতে তদন্তে কোন বাধাগ্রস্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, তাঁর বক্তব্যের সময় তিনি ছিলেন অন্য সময় তিনি ছিলেননা। মামলার বাদীকে গত রবিবার রাত ১২টার পর হোয়াটসঅ্যাপে তদন্তের একটি নোটিশ দেওয়াতে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তদন্তের সময় চট্টগ্রামের বাইরে থাকতে পারতেন। এতে তদন্তে উপস্থিত না ও থাকতে পারতেন। এই বিষয়ে বলেন, তিনি উপস্থিত যদি না থাকতো, পরে তাঁর বক্তব্য নেওয়ার সুযোগ আছে। তবে তদন্তের প্রতিবেদন কখন জমা দিবেন তার নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করতে পারেননি। 

আরএস