মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার ইছাপুরা সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসানো কোরবানির হাটের বর্জ্য সরানো হয়নি। মাঠে স্তুপ করে ফেলে রাখা হয়েছে হাটের অবকাঠামো তৈরি ও পশু বাঁধার জন্য আনা বাঁশ। পুরো মাঠ জুরে শত শত গর্ত। এর মধ্যে শুরু হয়েছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। মাঠে হাট বসানোর ফলে বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, প্রত্যাহিক সমাবেশ।
মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, দুই একরের বিশাল মাঠ জুড়ে অসংখ্য বড় বড় গর্ত। তাতে জমে আছে পানি। পশুবাধার বাঁশ মাঠের মধ্যভাগে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কাদা মাখা হয়ে যত্রতত্র পড়ে আছে বড় বড় মাটির বস্তা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে গোবর। সে সময় বিদ্যালয়টির দুটি ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছিল।
এ সময় স্থানীয় ও বিদ্যালয়টির সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন,খেলার মাঠ কে খেলার মাঠে হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। এখানে গবাদি পশুর হাট বসানো ঠিক নয়। হাট বসানোর কারণে প্রতিবছরই দেড় থেকে দুই মাস মাঠ খেলার অনুপযোগী থাকে।
হয়ত এলাকার মানুষের ভালোর জন্য এখানে হাট বসানো হয়। তবে যারা এখানে হাটের অনুমতি দেন, যারা হাট হিসেবে ইজারা নেন, এখানে হাট না বসিয়ে বিকল্প কোথাও বসায়, তাহলে সেটি সবার জন্য ভালো হয়।
দুপুর দেড়টার দিকে বিদ্যালয়ের মধ্যান্ন ভোজের বিরতি শুরু হয়। সে সময় শিক্ষার্থীরা মাঠের পাশ দিয়ে দৌড়ে বাহিরের দিকে আসতে থাকে। কেউ কেউ বিরতির সময়ে মাঠের পাশের শুকনা জায়গায় খেলা ধুলা করতে থাকে। তবে মাঠের অবস্থা বেহাল থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে,কেউ মাঠের পাশে বসে সময় পার করছিলো।
এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, রোববার থেকে তাদের স্কুলের ক্লাস শুরু হয়েছে। স্কুলে এসে তাঁরা মাঠের দূরঅবস্থা দেখেছে। তারা কোন ধরনের খেলাধুলা করতে পারছেনা। এছাড়া মাঠের মধ্যে থাকা বর্জ্যের পচা গন্ধে অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন। তারা মাঠটি দ্রুত পরিষ্কার করে খেলার উপযোগী করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, ৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০টাকায় এবার বিদ্যালয়ের মাঠটি অস্থায়ী হাটের জন্য জনতা সংসদ সংগঠনের নামে ইজারা দেয় উপজেলা প্রশাসন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও ইছাপুরা ইউপির চেয়ারম্যান সুমন মিয়া গত ১৫ জুন মাঠ ব্যবহারের জন্য প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
তারা ১৬ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত মাঠটি ব্যবহারের জন্য অনুমতি চান। বিদ্যালয়টি ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালে জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেনি পর্যন্ত ৯৬৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। গত ৪ বছর ধরে পাশের হার ৯৫ ভাগের উপরে।
ইছাপুরা সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.নাসির উদ্দিন বলেন,১২ বছর ধরে এ বিদ্যালয়ে আছি।তখন থেকে এ মাঠে হাট দেখছি। হাটের ইজারার ব্যাপারে আমাদের থেকে কেউ কখনো অনুমতি নেয়নি।আমাদের অনুমতি দেওয়ারও এখতিয়ার নেই।তবে আমাদের কাছে একটি আবেদন এসেছিল,সেটি রিসিভ করে রেখেছি।
তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয় মাঠে হাট হওয়ায় কিছুদিন এসেম্বলি ও শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সমস্যাতো হবেই।কোন বিদ্যালয়ের মাঠে কোন ভাবেই পশুর হাট কাম্যনা। তবে এ হাটটি যেহেতু সামাজের মানুষ চায়, সামাজিক ভাবে স্বীকৃত তাই আমরাও কিছুটা ছাড় দেই। তবে শুনেছি খুব শীঘ্রই মাঠকে খেলার উপযোগী করা হবে।
হাটের বজ্য সরানো ও হাট বসানোর ব্যাপারে ইছাপুরা ইউপি চেয়ারম্যান ও হাট ইজারাদার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুমন মিয়া বলেন, বিধি মেনে উপজেলা থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির কারণে আমরা মাঠের বাশ, বস্তা সরাতে পারেনি। দু একদিনের মধ্যে সেগুলো সরিয়ে রোলার করা হবে। মাঠ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.শরীফুল আলম তানভীর সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষদের চাওয়ার প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে এ হাট চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও মাঠে সরকারি নিয়ম মেনে হাটের ইজারা দেওয়া হয়েছিল। হাট শেষে ইজারাদারদের দ্রুত সময়ের মধ্যে মাঠকে খেলার উপযোগী করে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
যদি মাঠকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়, হাটের ইজারাদার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বন্ধের জন্য কেউ আবেদন করলে গন শুনানি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।