যশোরের অভয়নগরে মহাকাল বি.সি.সি মোজাদ্দেদিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার ১৭ ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। বাল্যবিবাহের জন্য মাদরাসার শিক্ষার্থী শুন্য কোটায় নেমে এসেছে। এদের মধ্যে দশম শ্রেণীর সাত জন, নবম শ্রেণীর ছয় জন, অষ্টম শ্রেণীর দুই জন ও সপ্তম শ্রেণীর দুই জন শিক্ষার্থী।
মাদরাসা সূত্রে জানায়, মহাকাল বি.সি.সি মোজাদ্দেদিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার ছাত্রীরা ২০২৩ সালে দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের জন্য রেজিং করে ২০ জন যার মধ্যে ১১ জন বাল্যবিবাহের শিকার হয়। ২০২৪ সালে দাখিল পরীক্ষার জন্য অংগ্রহণ করবে ২২ জন তার মধ্যে থেকে ও ১০ জনের বিয়ে হয়ে গেছে। মাদরাসায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এখন ১১ জন। অভিভাবকরাই সবাইকে গোপন করে এ বাল্যবিয়ে দিয়েছেন। জাল কাগজপত্র তৈরি করে বিয়ে সম্পন্ন করেছেন। বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে দাখিল পর্যন্ত ছাত্রী সংখ্যা ১০০ জন। বাল্যবিবাহের শিকার শিক্ষার্থীদের বয়স সর্বোচ্চ ১৬ বছর।
নবম ও দশম শ্রেনীর ছাত্রীরা বলেন, আমাদের সমাজের বাল্য বিয়ে কাম্য নয়। আমরা মাদরাসা ছাত্রী আমাদের সচেতন হতে হবে। পড়ালেখা করতে চাইলে বাসা থেকে বিয়ের কথা বলবে না। আমাদের অভিভাবকদের সচেতন হাওয়া উচিত।
মাদরাসার ১০-১২ জন ছাত্রীর সম্প্রতি বিবাহ হয়েছে। আমরা লেখা পড়া করছি বাসা থেকে যদি বিবাহের জন্য চাপ দেয় তাহলে আমরা বিয়ে করবো না। পড়া লেখার দিখে মনোযোগী হবো। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করবো।
মাদরাসার সহকারী শিক্ষকরা বলেন, প্রথম দিকে অনেক মেয়ে মাদরাসার ভর্তি হয়। কিছু দিন পরে তা শুণ্য কোটায় নেমে আসে। বয়স প্রাপ্ত না হওয়ার আগেই বল্য বিবাহের শিকার হচ্ছে। বিবাহ হওয়ার কারণে ছাত্রী শুন্য দেখা দিয়েছে। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটি টিকে থাকা দায় হয়ে পড়ে। তখন এর প্রভাবটা পড়ে শিক্ষকদের উপর। দেখা যায় বেতন বন্ধ সহ নানা অসুবিধা। প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের অপ্রাপ্ত বয়সে বিবাহ দিবেন না।
সহকারী সুপার আবু তাহের বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালের দাখিল পরীক্ষার্থী রেজিং করা হয়েছে ২২ জন। ২০২৫ সালে পরীক্ষা দিবে। যারা নবম শ্রেণীতে আছেন ২৫ জনের মত। এদের মধ্যে থেকে ৫০% বাল্য বিবাহের শিকার হচ্ছে।
অভিভাববক সদস্য আব্দুল কুদ্দুস গাজী বলেন, মাদরাসার প্রাথমিক ভাবে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে পড়াশুনা করে। অষ্টম শ্রেনীতে উঠার পরপরই তাদের বিয়ে হয়ে যায়। আর এই বাল্যবিয়ে পড়ায় যারা আমি তাদের প্রতি তিব্র প্রতিবাদ জানায়।
মাদরাসার সভাপতি মো. আলী হোসেন বলেন, মাদরাসায় এবার মাত্র ১১ জন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবে। মাদ্রাসার সুপার আব্দুল হক শিকদার চেঙ্গুটিয়া ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী। তিনি মাদরাসার ছাত্রীদের সচেতন না করে বাল্যবিবাহ দিয়ে থাকে। মাদরাসার সুপার বহু বাল্যবিবাহের হোতা। তার ছেলেকে দিয়ে এ কাজ গুলো করে থাকেন। সুপার মাদরাসাটি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন।
মাদ্রাসার সুপার আ ন ম আব্দুল হক শিকদার বলেন, আমার বিরুদ্ধে শিক্ষক ও অভিভাবকদের যে অভিযোগ তা সম্পূর্ন মিথ্যা। আমি মুলত বিবাহের রেজিং করে থাকি। সরকার লাইসেন্স দিয়েছে রেজিং করার জন্য। আমি শুনেছি অভিভাবকেরা তাদের মেয়েদের বিবাহ দিয়েছে। আমি বাল্যবিবাহেস সাথে কোন ভাবেই জড়িত নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেলে তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আরএস