অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, অপ্রতুল বেড সংখ্যা, জলাবদ্ধতা, বিশুদ্ধ পানির অভাব এমনই অবস্থা ছিল কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন ডাক্তারদের চেষ্টায় পাল্টাচ্ছে হাসপাতালের রূপ, বাড়ছে সেবার মান, বদলে যাচ্ছে হাসপাতালের চিত্র। সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। রোগী ও স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে আশার আলো।
গোপালগঞ্জে রোগীদের আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখন হাসপাতালে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে পুষ্প শোভিত বাগান। ১০০ শয্যার সরকারি এ হাসপাতালে এখন অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সেবা দিচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশ করলেই মনে হবে যেন কোনো প্রাইভেট হাসপাতাল।কোনো রোগী এলেই ছুটে আসছেন কর্তব্যরতরা।
সরকারি এ হাসপাতালটিতে বর্তমানে বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগের রোগীদের অনেক ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। শুধু প্রসূতি মায়ের চিকিৎসাই নয়, স্বাভাবিক ডেলিভারি হচ্ছে। তাই পার্শ্ববর্তী নাজিরপুর, উজিরপুর, আগৈলঝাড়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের রোগীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা গ্রহণ করে থাকেন প্রতিদিন। গড়ে ৭০০-৮০০ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা ও ওষুধ গ্রহণ করছেন নিয়মিত।
যেকোনো রোগীর চিকিৎসায় দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে সেবা। রোগ নির্ণয়ে অধিকাংশ রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, ওটি, চোখের আধুনিক চিকিৎসা সেবা। এখন শুধু এক্স-রে, জিন এক্সপার্ট মেশিনে যক্ষ্মা নির্ণয় চালুর অপক্ষো। তবে রোগী পরিবহণে রয়েছে ২টি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স।
হাসপাতালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৫০ শয্যার কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও ১০০ শয্যার জন্য যে জনবল দরকার তা থেকে অনেক কম। ২০২১ সালে ভর্তি, জরুরী ও বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নেয়া রোগী ছিল যথাক্রমে ৭ হাজার ৪৯১, ৯ হাজার ৪০৪ ও ৯১ হাজার ৬৭৩ জন। ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৮ হাজার ৯৬০, ১০ হাজার ৯২২ ও ১ ল ১৫ হাজার ৮৭৬ জন। এছাড়া নরমাল ডেলিভারি ও ওটি হয়েছে ২০২১ সালে ২০৭ জন ও ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ৩২১ জন।
নিরাপত্তা ও আধুনিকতায় এগিয়ে রয়েছে হাসপাতালটি। সৌন্দর্যবর্ধনে ফুলের বাগান ও বৈদ্যুতিক বাতিতে আলোকিত হাসপাতালটি সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে নিরাপত্তা। চিকিৎসা কাজে নিয়োজিতদের সঙ্গে সভা-সমাবেশের জন্য রয়েছে সুসজ্জিত আধুনিক হলরুম। এমন সেবায় সন্তুষ্ট রোগী ও এলাকার জনগণ।
সেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, আগের তুলনায় হাসপাতালটির অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
উপজেলার বাসিন্দা রাধাগঞ্জ ইউনিয়ন সভাপতি সর্বানন্দ বৈদ্য, নাগরা গ্রামের ছালেহা বেগম, বাগান উত্তরপাড়ের জি এম জিয়া উদ্দীন, বান্দল গ্রামের সানজিদা, রাধাগঞ্জ গ্রামের রাজু মিয়া, উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের সুনীল কুমার বিশ্বাসসহ আরো অনেকে বলেন, প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকলেও ডাঃ নন্দা সেন গুপ্তা ও অন্যান্য চিকিৎসকরা যে ভাবে সেবা ও কষ্ট করেন তা প্রশংসনীয়।
হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নন্দা সেন গুপ্তা জানান, হাসপাতালটিতে সেবার মান বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের সহযোগিতায় বেশ কিছু কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছি। কিন্তু ১০০ শয্যায় যে জনবল থাকা দরকার, তা না থাকায় রোগীদের সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদি জনগণ আমাদের সাহায্য করে তাহলে আমাদের লক্ষে পৌঁছেতে পারবো।
এইচআর