ইচ্ছে শক্তি আর আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে হুইল চেয়ারে বসে কেন্দ্রে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ -৫ পেয়েছেন মাহমুদুর রহমান নেহাত। তার ইর্ষণীয় সাফল্যের কারণে পিতা-মাতা, শিক্ষক, সহপাঠীসহ এলাকার সবাই খুশি।
সে উপজেলার খোপাতী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
মাহমুদুর রহমান নিহাত উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের খোপাতী গ্রামের দরিদ্র মুরগী বিক্রেতা আব্দুল হান্নান মিয়ার ছেলে। মাহমুদুর রহমান নেহাত জানায়, তারা দুই ভাই ছোট ভাই নিয়ামুল পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। নিজেদের কোন জমিজিরাত নেই। এমন কী বাড়ি ভিটা টুকুও নেই। চাচার দেওয়া এক টুকরা জমিতে কোন রকমে ঘর করে থাকনে তারা।
বাবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুরগী কিনে ফেরি করে হাট বাজারে বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকমে চলে চার সদস্যর সংসার।
নেহাত সবার দোয়া, ও ভালোবাসা নিয়ে একটি ভালো কলেজে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পরিবারের অভাব দূর করতে চায়। নেহাত জানায়, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ আন্তরিকতার সঙ্গে পাঠদানসহ সাধ্যমত সহযোগিতা করায় সে ভালো ফলাফল করেছে।
পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহের ব্যাপারে জানতে চাইলে অদম্য মাহমুদুর রহমান নেহাত জানায়, সে শারীরিক অক্ষমতা কে বোঝা মনে না করে প্রতিদিন ৫/৬ ঘন্টা করে পড়ালেখা করেছে। আর্থিক অনটনের কারণে বই কিনতে না পেরে বন্ধুদের কাছে বই ধার নিয়ে পড়েছে সে। সবার ভালোবাসা আর বিত্তবান মানুষের আর্থিক সহযোগিতা পেলে সে পড়ালেখা করে অনেক বড় হতে চায়। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চায় সে। কিন্তু অভাবের সংসারে তার স্বপ্ন কী পূরণ হবে।
তার মা নারগিস পারভীন জানায়, জন্মের পর থেকে পায়ের শক্তি কমে যায় মাহমুদুরের । দুটি পা চিকন হয়ে যায় এবং হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। বড় হবার সাথে সাথে তার পা দুটি একেবারেই অকেজো হয়ে পড়ে। এখন সে আর হাটা চলা করতে পারেনা। পরে এক হৃদয়বান ব্যক্তি তাকে একটি হুইলচেয়ার প্রদান করেন। এখন তার জীবনের সবকিছুই হুইল চেয়ারেই সীমাবদ্ধ। তিনি তার ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য দোয়া ও আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন।
খোপাতী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই জানান, মাহমুদূর রহমানের হুইলচেয়ারে খাওয়া-দাওয়া হুইল চেয়ারেই লেখা পড়া- এভাবেই চলছে মাহমুদূরের জীবন। মাহমুদূর প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করে ভালো কলেজে ভর্তির স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, সে মেধাবী শিক্ষার্থী। তার বন্ধুদের সহযোগিতায় হুইলচেয়ারে বসে সে নিয়মিত স্কুল আসত। শিক্ষকরা আন্তরিকতার সঙ্গে তাকে পাঠদানসহ সব সময় খোঁজখবর রাখতেন। প্রবল ইচ্ছে শক্তির কারণে পড়ালেখা করে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সরকার ও বিত্তবানদের একটু সহানুভূতি পেলে তার উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন পূরণ হবে।
এআরএস