ডেঙ্গুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডাবের দাম

আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৩, ০৪:৪৮ পিএম
ডেঙ্গুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডাবের দাম

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দিনের পর দিন বেঁড়েই চলছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩১৩ জন। এই অবস্থায় ডেঙ্গু রোগীদের সবচেয়ে প্রয়োজন তরল খাবার বা বিভিন্ন ফলের জুস। তার মধ্যে ডাব হচ্ছে অন্যতম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে ডাব গাছ থেকে পাড়তে না পারায় বাজারে চলছে ডাবের সংকট। যাও আছে তার দামও নাগালের বাইরে। সব মিলিয়ে অন্তত ডাবের কাছে অসহসায় ডেঙ্গু রোগির পরিবার।

আশুলিয়ায় এলাকাভেদে প্রতি পিস বড় আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। আর ছোট ও মাঝারি আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত।

আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার ক্রেতাদের সাথে কথা বললে তারা দাবি জানান, ডাবের বাজারে চলছে সিন্ডিকেট। ডেঙ্গুর প্রভাব থাকায় চড়া দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আড়তেই ডাবের দাম বেশি। অন্যদিকে আড়তদাররা বলছেন, টানা বৃষ্টি থাকায় গাছ থেকে ডাব পাড়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই বাজারে ডাব কম। তবে দামের ব্যাপারে পরিবহন খরচকেই দোষারোপ করছেন পাইকারি বিক্রেতারা।

ডাব কিনতে আসা মো. গোলাম নবী নামে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত এক রোগীর আত্মীয় বলেন, আমার ছোট ভাই ডেঙ্গু আক্রান্ত। তাকে আশুলিয়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে তাকে তরল খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। ডাক্তার রোগীকে ডাবের পানি খাওয়ানোর পরামর্শ দিলে তার জন্য ডাব কিনতে আসলাম, এসে দেখি ডাব প্রতি পিস নিচ্ছে ১৬০ টাকা করে।

আজ মঙ্গলবার সকালে আশুলিয়ার থানা এলাকা, বাইপাইল, সরকার মার্কেট, নরসিংহপুর ও পল্লিবিদ্যুৎ এলাকার অন্তত ৮/১০জন খুচরা ও পাইকারি ডাব বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয় দৈনিক আমার সংবাদের এই প্রতিবেদকের।

শাজাহান নামের এক ভ্রাম্যমাণ ডাব বিক্রেতা বলেন, আজকে বাজারে মাল (ডাব) নাই। যা আছে দাম অনেক দেশি। এছাড়াও যা আছে তাও নারিকেল হয়ে গেছে। যার ফলে আজ নারিকেলসহ ডাব নিয়ে আসছি। দামের ব্যাপারে এ বিক্রেতা জানান, আজকে প্রতি পিস ডাব (নারিকেল) আড়ত খরচসহ কেনা পরেছে ৮৫ টাকা করে। আজকের ভ্যান ভাড়া ৭০ টাকা। তার পরে আমার খরচতো আছেই। তাই বিক্রি করছি ১২০ টাকা দরে। যেটা খুশি বেঁছে নিতে পারবে।

অন্য ডাব বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম জানান, আড়ত থেকে ডাব কেনার পরে আড়ত খরচ দিতে হয়। তার পরে ভ্যান ভাড়া দিয়ে দোকানে আনতে হয়। সব মিলিয়ে এক পিস ডাব আমার কেনা পরেছে ১৩৩ টাকা। তাই বাধ্য হয়ে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। আড়তেই ডাবের দাম বেশি সুতরাং আমরা কি করবো।

আশুলিয়ার বাইপাইল ফল আড়তের পাইকারি বিক্রেতা মা ট্রেডার্সের প্রোপাইটর মো. সানোয়ার হোসেন বাবু বলেন, ডেঙ্গু জন্য দাম বেড়েছে এটা সত্য, তবে সেটা আমাদের এখানে না। যারা গাছ থেকে বিক্রি করছে তারাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন আগের চেয়ে বাড়তি দামে গাছ থেকে ডাব কিনতে হচ্ছে। আগে যে ডাব কিনতাম ৩০ থেকে ৪০ টাকায় সেই ডাব এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। তাও এই দাম হচ্ছে খুলনার দিকে, বরিশালের দিকে দাম আরও বেশি।

তিনি আরও বলেন, ডাব কেনার পরে তার পিছনে পারার জন্য ৫ টাকা লেবার খরচ আছে। এক একটা ডাব ঢাকায় আনতে ১০টার বেশি ভাড়া পরে। যার ফলে আমার এখানে আসতে আসতে বর্তমানে ৭০ টাকা পরে যায়। তবে যদি এই ডাব বরিশাল থেকে আনতে যাই তাহলে ৮০ থেকে ৯০ টাকা পরবে। এর পরে আমাদের লেবার খরচ আছে, আড়তের খরচ আছে, তার পরে আমাদের বিক্রির দাম। বর্তমান বাজার অনুসারে আমরা ১০০ থেকে ১১০ টাকায় প্রাইকারি বিক্রি করছি।

আশুলিয়ার মোজারমিল এলাকার ব্রিটিশ অ্যামেরিক্যান টোব্যাকো কোম্পানীর মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নিশাদ আলমগীর বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে, ডেঙ্গু রোগীদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে, যখন তাদের প্লাটিলেট কমে যায়, তখন তাদের ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়। মানুষের শরীরে কিন্তু প্রতি নিয়ত প্লাটিলেট তৈরী হয়, কিন্তু যখন ডেঙ্গু হয় তখন কিন্তু প্লাটিলেট তৈরী হওয়ার চেয়ে কমে যায় বেশি। তখন হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রসালো খাবার, পানি বা ফলমূল খেতে হয়। যাতে শরীরে পানি শূন্যতা না হয়।

তিনি আরও বলেন, ডাবের পানিতে কিছু ইলেক্ট্রোলাইট আছে, তার মধ্যে একটা আছে পটাশিয়াম। ডাব খেলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স থাকে। যার কারণে ডাব খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ শরীরে যদি ইলেক্ট্রোলাইট কমে যায় যেমন পটাশিয়াম কমে গেলে রোগী মারাও যেতে পারে। তাই শরীরের অন্যান্য ইলেক্ট্রোলাইটের সাথে পটাশিয়াম লেভেল টা যেন ঠিক থাকে তাই ডাবের কথা বলা হয়। ডাবের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্লাটিলেট তৈরী হওয়াটাকে আরও একটু বেশি তরান্বিত করে।

এআরএস