চলতি বর্ষার মৌসুমে টানা ভারী বর্ষণ ও অতি বৃষ্টিপাতের কারনে নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে, পাহাড় ধ্বসে বান্দরবানের থানচিতে সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শিকার হয়েছে।
৭ আগস্ট থেকে জেলার সাথে থানচি উপজেলা সড়ক পথে সম্পূর্ণরূপে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নেই সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও নেই পর্যাপ্ত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ। যার কারনে সাধারণ মানুষের মাঝে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে।
জানা যায়, মিলনছড়ি, ডাক বাংলো, কালা পাহাড়, পোড়া বাংলা, নীলগিরি, জীবন নগর, শিলাঝিড়ি, দিংতে পাড়াসহ আরো বিভিন্ন স্থানে সড়ক পথ খন্দ খন্দ ভাবে ভেঙ্গে গিয়ে রাস্তায় বড় গর্ত আকার ধারণ করে ঝিড়িতে পরিনত হয়ে যাওয়ায় সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সড়কের পাশে দাঁড়ানো বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো সড়কে সাথে সাথে ভেঙ্গে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিছিন্ন হয়ে যায়। বিদ্যুৎ ও সড়ক বিছিন্ন থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক একেবারে বন্ধ হয়ে গেলেও এখন সীমিত নেটওয়ার্ক সরবরাহ করা হয়েছে। যার কারনে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
থানচি বলিপাড়া ইউনিয়নের কমলা বাগান পাড়া আগাথা ত্রিপুরা বলেন, আমার এক একর জুমের উপর পাহাড় ধ্বসে মাটির সাথে জুমের ধান বিলীন হয়ে গেছে, অবশিষ্ট অল্পকিছু বাকি এখন কি হবে জানিনা।
থানচি সদর ইউনিয়নের আপ্রুমং পাড়া মংসিংউ মারমা বলেন, টানা বৃষ্টিতে আমার ধানি জমিতে পানি ডুবে গিয়ে ধানের উপর কাদা মাটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও আমার আরো অনেক কিছু ক্ষতি হয়ে গেছে এই বৃষ্টিতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৯শত টাকার চাউল ২৫শত টাকা দিয়ে কিনে নিতে হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এভাবে চলতে থাকলে কেমনে চলবে ও বাঁচবে জানিনা।
এই নিয়ে বলিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা বলেন, আমার ইউনিয়নের পানি বন্দি ও পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোকে তালিকা তৈরি করতে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর, আমি বাড়ীতে না ফিরতেই আমার বাড়ি পানিতে ডুবে যায়। পাড়াবাসীদের সহযোগিতায় আমার পরিবার উচ্চ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আমার ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক মানুষের মাঝে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বিদ্যুৎ সংযোগ কবে নাগাদ পাওয়া যাবে, এই নিয়ে থানচি উপজেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন অফিসার নেপচুন খিসাকে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে, মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে বিদ্যুৎ বিভাগ অতিদ্রুত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এই নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহা. আবুল মনসুর বলেন, একটানা বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় ও পাহাড় ধ্বসে এই এলাকায় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করায় ব্যাপকভাবে অতিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বর্তমানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে অতিশীঘ্রই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে কাজ শুরু করা হচ্ছে।
এই মুহূর্তে মানুষের মাঝে আয় উপার্জন করার সুযোগ নেই। তাই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে যাতে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়া না হয়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রশাসনের ব্যাপক তদারকি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন, এলাকার সচেতন মহল। এতে জনদুর্ভোগের মধ্যেও সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে।
এইচআার