রংপুরের কাউনিয়ায় ‘মায়ের আদর কেমন গত ১৯ বছরে তা ভুলে গেছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত রেজিয়া বেগমের ছোট ছেলে নূরনবী।
বর্তমানে টানাটানি করে সংসার চললেও মাতৃস্নেহের জন্য বুকটা ফেটে যায় তাদের। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত রেজিয়া বেগমের সন্তানেরা, নূরনবীর মতো অন্য স্বজনরাও আঁতকে ওঠেন ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের বর্বরোচিত সেই হামলার ছবি দেখলেই । এখনো বিচার না হওয়ায় হতাশ রেজিয়ার পরিবারের সদস্যরা।
কাউনিয়া উপজেলার ৫নং বালাপাড়া ইউনিয়নের গঙ্গানারায়ণ গ্রামে গিয়ে দেখা যায় রেজিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর ছেলেসহ স্বজনরা অভাবী সংসারে সাধ্যমতো মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
এদিকে রেজিয়া বেগমের বড় ছেলে হারুন-উর-রশীদ জানান, ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে ভিসায় ছবি লাগানোর কাজ করতেন তাঁদের মা। থাকতেন ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায়। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে রেজিয়া বেগমের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। আওয়ামীলীগের নেত্রী আয়শা মোকাররমের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। জনসভা চলাকালে হঠাৎ ভয়াবহ গ্রেনেড বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকা। সে সময় ঘটনাস্থলেই অন্যদের সঙ্গে মারা যান রেজিয়া বেগম। পরদিন ২২ আগস্ট রেজিয়ার বাবা আফাজ উদ্দিন ঢাকায় গিয়ে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে আজিমপুর কবরস্থানেই তাকে দাফন করা হয়।
হারুন-উর-রশীদ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার গদিত বসার পর হামরা মনে করছি এইবার মার হত্যার বিচার পামো। কিন্তু ১৯ বছর পার হইল এ্যালাও তো বিচার পাইনো না। নানাও মার বিচার দেখি যাবার পাইল না।’
রেজিয়ার ছোট ছেলে পান দোকানদার নূরনবী জানান, ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের আট লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। এর আগে দিয়েছিলেন এক লাখ টাকা। তাঁদের পুরো পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার হলে মায়ের আত্মা শান্তি পাবে। কিন্তু মাতৃস্নেহের জন্য তাঁদের বুক ফেটে যায়। তিনি বলেন, ‘১৯ বছর থেকে মায়ের হত্যাকারীদের বিচারের আশায় দিন গুনছি।
তিনি জানান, তার মা নিহত হওয়ার পর আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই কিস্তিতে পাওয়া ৩২ লাখ টাকা বড় ভাই হারুন অর রশিদসহ ভাগ করে নিয়ে কাউনিয়ায় গঙ্গাণারায়ন গ্রামে কিছু জমি কিনেছেন, তিনি নিজে কয়েকটা গরু কিনে খামার দিয়েছেন এবং কিছু টাকা শেষ সম্বল হিসেবে ব্যাংকে রেখেছেন। প্রতি বছর এই দিনে কাউনিয়া ৫নং বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বালাপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আনছার আলী তাদের খোঁজখবর নিলেও এবছর এখনো কেউ কোন খোঁজখবর নেয়নি।
নুর নবী বলেন, গ্রেনেড হামলার ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার বিচার সম্পন্ন না হওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত। অবিলম্বে গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান তারা।
গ্রেনেড হামলায় নিহত রেজিয়া বেগমের পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে, কাউনিয়া উপজোলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া জানান ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পরিবারটির ওপর সব সময় সদয় দৃষ্টি রেখে চলেছেন। আমরা দলের পক্ষ থেকেও পরিবারটির খোঁজ-খবর রাখছি। আমাদের এলাকার মন্ত্রী মহোদয়ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
আরএস