রামু যাওয়ার জন্য নাকে হাত দিয়ে চেপে ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসাপালে আসা রোগী ইয়াছমিন আক্তার৷ দ্রুত হেঁটে রাস্তায় থাকা ময়লার ভাগাড় পার হলেই স্বস্তি৷ ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধে বমি আসার জোগাড় হয় তার৷ শুধু ইয়াছমিন নয়, তার চেয়ে মুমূর্ষু রোগী, হাজারো পথচারী আর এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিদিন এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।
এই রাস্তার ঠিক পাশেই রয়েছে কক্সবাজার পৌরসভার ময়লার ভাগাড়। পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা আশপাশের এলাকা থেকে সংগ্রহ করা ময়লা সারাদিন এখানেই ফেলে ময়লা স্তুপ করে রাখে। আবার পরিছন্নকর্মীরা সময়-সুযোগ না মেনে সব সময় ময়লা নাড়াচাড়া করেছে। সেই নাড়াছাড়া করা ময়লা আবর্জনা খেয়ে বেড়াচ্ছে গরু৷ ফলে এ ময়লার স্তূপটি এখন হাসপাতালে আসা মুমূর্ষু রোগী, পথচারীরা, স্কুলে পড়ুয়া শত শত শিক্ষার্থী আর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে মহাভোগান্তির নাম।
সোমবার (২৮ আগস্ট) দুপুর ২টায় সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক আই. বি.পি রোড৷ যে রোড দিয়ে স্কুলের কোমল মতি শত শত শিক্ষার্থী, হাসপাতালে আসা অসংখ্য সাধারণ আর মুমূর্ষু রোগী, পাশে হিন্দুদের ধর্মীয় সর্বজনীন হরিমন্দির ও পিটাকিট বৌদ্ধ বিহার, সাথে প্রধান সড়ক থেকে এ রোড দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার পথচারীদের যাতায়ত৷ এমন জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উপরেই রয়েছে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়৷
বিশেষ করে দেখা যায়, প্রতিদিনই শত শত শিক্ষার্থী, এবং হাসপাতালে আসা অসংখ্য সাধারণ আর মুমূর্ষু রোগী, এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন কাজ শেষ করে আবার তারা ফিরে যাচ্ছে। জনগুরুত্বপূর্ণ আই.বি.পি রোডের মাঝখানেই ময়লায় ভাগাড়। দুর্গন্ধ তো আছেই, সেই সঙ্গে ময়লা পরিবহনের ভ্যান আর তাদের ময়লার ডাম্পার গাড়ির কারণে সেখান দিয়ে যান চলাচলও প্রায় অসম্ভব। এমনকি ফুটপাতেও ময়লা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আর এসব কারণে সড়কে চলাচলও বিঘ্নিত হচ্ছে। শিক্ষার্থী, পথচারী, সাধারণ আর মুমূর্ষু রোগী, এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছে। নাকে হাত না দিয়ে এ এলাকা দিয়ে যাতায়াত এক রকম অসম্ভব।
আই.বি.পি রোড এলাকার বাসিন্দা অনুপব্রত বলেন, ‘পৌরসভা শহরের মানুষের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করে। বিনিময়ে নাগরিকদের একটু সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করবে এটাই নিয়ম। কিন্তু শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ রোড এবং হিন্দুদের ধর্মীয় দুইটি সর্বজনীন হরিমন্দির ও পিটাকিট বৌদ্ধ বিহারের সামনে রাস্তার উপরে ময়লার স্তূপ রাখা হয়েছে৷ এ রোড দিয়ে হাজার হাজার মানুষের যাতায়ত, প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী আর রোগীরা আসা যাওয়া করে সেই রোডে ময়লার ভাগাড়৷ এগুলো যেন দেখার কেউ নেই।’
আই.বি.পি রোড়ের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শমসুল আলম বলেন, আগে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এখানে থেকে ময়লা নিয়ে গেলেও এখন না নেওয়ার এটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দিন দিন রাস্তার উপরে ময়লা আবর্জনার স্তূপটি আরও বড় আকার ধারণ করছে। এতে করে আমাদের এলাকার পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার ময়লা আবর্জনা এনে এইখানে ফেলে যায়৷ এ সমস্যার কথাটি পৌরসভাকে কয়েকবার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তারা৷
জেলা যুবলীগের সভাপতি ও স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল আহমদ বাহাদুর এ প্রতিবেদককে জানান, দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার সাথে এ ময়লার স্তূপ নিয়ে আন্দোলন আর সংগ্রাম করে যাচ্ছি৷ কিন্তু পৌরসভায় পরিবেশ নষ্ট করছে৷
তিনি বলেন, কক্সবাজার শহরের মধ্যে এর চেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ রোড আর নেই বললে চলে৷ যে রোডটি জেলা শহরের ৫টি হাসপাতালের সাথে সংযুক্ত, ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত৷ সাথে প্রধান সড়কের সাথে সংযুক্ত এমন গুরুত্বপূর্ণ রোড দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পথচারীরা যাই৷
যুবলীগ সভাপতি বাহাদুর জানান, পৌরসভার নর্বনির্বাচিত মেয়রের প্রতিশ্রুতি ছিল স্মার্ট এবং পরিবেশ বান্ধব পর্যটন শহর ও পৌরসভা করবে৷ কিন্তু এমন দূষনীয় পরিবেশত সেই স্মার্ট আর পরিবেশ বান্ধবের মধ্যে পড়েনা৷
এ ময়লার ভাগাড় দ্রুত সরিয়ে নেয়ার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে নবনির্বাচিত মেয়রের প্রতি জোর দাবী জানান যুবলীগ সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর৷
এবিষয়ে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও রিসিভ না করাই বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি৷
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সরওয়ার আলম এ প্রতিবেদকে জানান, আপনার থেকে বিষয়টা মাত্র শুনেছি৷ এমন জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এইভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখা খুবই দুঃখজনক বিষয়৷
আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছি৷
এআরএস