টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর আজ ১লা সেপ্টেম্বর থেকে আবারো উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে সুন্দরবন। মূলত বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়াতে গত ১লা জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকে সুন্দরবনে মাছ শিকার ও পর্যটন পরিবহণ এবং ভ্রমণ।
বনবিভাগ জানায়, প্রজনন মৌসুমে পূর্ব সুন্দরবনের ২লাখ ৪৩হাজার হেক্টর আয়তনের বনের ৪২০টি নদী-খালে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এতে ইলিশসহ ৪৭৫প্রজাতির মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন হয়েছে। আর এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছিলো মোংলার বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন নির্ভরশীল প্রায় ১০ হাজার জেলে পরিবার। প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় সুন্দরবনে ২৯১ প্রজাতির মাছের বংশবিস্তার বেড়েছে। আর বনের ৩১৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর প্রজননও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে পর্যটনবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় দর্শনার্থীদের ভ্রমণও বন্ধ থাকে। এতে তিন মাস ধরে বেকার সময় পার করেন ট্যুরিস্ট ব্যবসায়ীরা। এখানকার ৬০টি ট্যুরিস্ট লঞ্চ ও সাড়ে ৪শ ট্রলার-জালিবোটের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৫হাজার পরিবার অলস সময় কাটিয়েছেন।
তিন মাস বন্ধ থাকার পর ১লা সেপ্টেম্বর থেকে দর্শনার্থীদের নিয়ে বনের পর্যটন স্পটগুলোতে যাচ্ছেন পর্যটনবাহী নৌযানগুলো। দ্যা সাউদার্ন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস`র মালিক পর্যটন ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকালে পর্যটক নিয়ে ৪টি লঞ্চ সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে। আর ট্রলার ও জালিবোটেও পর্যটকেরা যাচ্ছেন করমজলে। তবে তিন মাসে যে ক্ষতি হয়েছে আমাদের তা কোনভাবেই কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয়।
জাতীয় মৎস্যজীবি সমিতির মোংলা শাখা সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল বলেন, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় আজ শুক্রবার ভোর থেকেই বনবিভাগের কাছ থেকে পাস পারমিট নিয়ে জেলেরা সাগর ও সুন্দরবনে মাছ শিকারে যেতে শুরু করেছেন। নিষেধাজ্ঞার সময় জুড়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করেছেন জেলেরা। এ সময় জেলেরা নামমাত্র যে চাল পেয়েছিলো তা ছিলো চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, তিন মাসের নিষেধাজ্ঞায় বনের নদী-খালে মাছ ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে, এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হয়েছে।
তবে নিষেধাজ্ঞার সময়ে পর্যটন ব্যবসায়ীদের যে আর্থিক হয়েছে তা কোনভাবেই কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয় বলে জানান ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, জেলেরা নিষেধাজ্ঞাকালে সরকারের জাল সহায়তা পেলেও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা সরকারের কোন ধরণের সহায়তা পাননি। #
হাফিজুর/এআরএস