শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে তিন দিন ধরে এক প্রসূতি নারী ভর্তি হয়েছেন। তাকে দেখার কেউ না থাকায় নবজাতক শিশুসহ একা একা কষ্টে দিন পার করছিলেন ওই মা। হাসপাতালে পুলিশ কেসের রোগীদের দেখতে গিয়ে ওই নারীর খবর পেয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) আক্তার হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাত ১০ টার দিকে নারিকেল গাছ থেকে পড়ে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে এমন খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে আক্তার হোসেন জানতে পারেন আসমা নামে এক নারী নবজাতক শিশুকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। পরে তিনি ওই নারী ও শিশুর জন্য খাবার, জামা কাপড় কিনে দিয়েছেন।
আসমা খাতুন শরীয়তপুর পৌরসভার কুরাশি এলাকার মজিবুর বেপারীর মেয়ে। তার স্বামী মিলন মোল্লা বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার রূপধন এলাকার মোসলেম মোল্লার ছেলে।
আসমা খাতুন জানান, তিন দিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। বাবা, মা ও স্বামীর পরিবারের কেউ তার খোঁজ খবর নেয়নি। হাসপাতালের নার্স ও পাশ্ববর্তী রোগীর স্বজনদের সহযোগিতায় তিনি মা হয়েছেন। ঠিকমত না খাওয়ার কারণে বুকের দুধ পায় না শিশুটি। ফিডার ছিল না বলে চা চামচ দিয়ে সাদা পানি খাওয়াচ্ছিলেন নবজাতককে। এমন খবর পেয়ে পালং মডেল থানার ওসি আক্তার হোসেন এসে তাকে ফলমূল, বাচ্চার জন্য ফিডার, দুধ, কাপড়, মশারি কিনে দিয়েছেন। এসময় তুলাসার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম ফকির অন্য এক রোগী দেখতে আসলে তিনি আসমার খবর পেয়ে নব জাতকের জন্য পোষাক ও মায়ের জন্য ফলমূল কিনে দিয়েছেন।
আসমা খাতুন বলেন, একজন নারীকে মা হতে হলে যে কত কষ্ট করতে হয়, তা ওই নারী ছাড়া অন্য কেউ জানে না। স্বামী ফেলে যাওয়ার পর মা বাবাও বাড়িতে জায়গা দেয়নি আমাকে। প্রেগনেন্ট অবস্থায় অন্যের বাড়িতে কাজ করেছি। তিন দিন হলো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। আমার খবর কেউ নেয় নাই। পালং মডেল থানার ওসি স্যার, সাংবাদিক ও সাবেক একজন চেয়ারম্যান আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিশেষ করে পালং মডেল থানার ওসি স্যার আমার ও বাচ্চার চিকিৎসাসহ যাবতীয় খরচ দিবেন বলেছেন। আমার দুঃসময়ে ওসি স্যার আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এমন মানবিক ওসি আর দেখিনি আমি। ওসি স্যারের জন্য দোয়া করি, তিনি অনেক বড় অফিসার হবেন।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স তাজনাহার বলেন, শুরু থেকে ওই নারীর সাথে কোনো স্বজনকে আমি দেখিনি। খুব কষ্ট করছেন হাসপাতালে বসে। ওয়েলফেয়ারের মাধ্যমে তার খরচ বহন করা হচ্ছে। খুব সুন্দর একটা বাচ্চা হয়েছে তার। দেখতে চাঁদের মত।
পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, হাসপাতালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে এসে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারি এক নারী ও তার বাচ্চা অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ওই নারী ও তার বাচ্চার পাশে দাঁড়িয়েছি। বাচ্চার বাবা ও ওই নারীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ঝগড়া মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
নয়ন/এআরএস