কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে জলদস্যু সর্দার মঞ্জুর আলম মঞ্জুসহ চক্রের সাত জনকে আটক করেছে র্যাব-১৫ এর অভিযানিক দল৷ এসময় তাদের হেফাজত হতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ৩টি দেশীয় তৈরী বন্দুক, ৪ রাউন্ড কার্তুজ, ৩ রাউন্ড এ্যামুনিশন, ২টি কিরিচ, ২টি সুইচ গিয়ার চাকু, ২টি টর্চ লাইট এবং ৭টি বাটন মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
আটকরা হলেন মো. মঞ্জুর আলম মঞ্জু (৩৮), মো. বাহার উদ্দিন বাহার মাহবুব (৩২), মকছুদ আলম (৩২), মো. তোফায়েল (২১), মো. দিদার (৩০), ইকবাল হোসেন (৩৫) ও মোহাম্মদ রাশেদ (২৭)৷
১০ সেপ্টেম্বর রাত ২টা ১০ মিনিটের দিকে শহরের নাজিরারটেক মোস্তাকপাড়া বাজারের উত্তর পশ্চিম মাছ ঘাটের চরের মধ্যে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে জলদস্যু সর্দার মঞ্জু’সহ চক্রের ৭ জনকে আটক করা হয়৷
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে র্যাব-১৫ এর মিডিয়া সেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাব-১৫ এর অধিনায়কের পক্ষে সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) মো. আবু সালাম চৌধুরী৷
র্যাব জানায়, কক্সবাজারের জেলে সম্প্রদায়ের অসংখ্য লোক বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু জলদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠার ফলে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জন্য রীতিমত আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিনিয়তই জলদস্যুরা জেলেদের মারধর করে জাল, মাছ ও নগদ অর্থ ইত্যাদি লুটপাট করে নিয়ে যায়। সেই সাথে জলদস্যুরা অনেক জেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও ক্ষেত্রবিশেষ জেলেদের খুন পর্যন্ত করে থাকে।
তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের জলদস্যু চক্রকে আটকের লক্ষ্যে মাঠে নামে র্যাব-১৫ এবং একই সাথে বৃদ্ধি করা হয় র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী ও তৎপরতা।
র্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, গোয়েন্দা সূত্রে র্যাব জানতে পারে যে, কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডস্থ নাজিরারটেক মোস্তাকপাড়া বাজারের উত্তর পশ্চিম মাছ ঘাটের চরের মধ্যে জলদস্যুদের একটি দল দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রসহ সমবেত হয়ে সমুদ্রে ডাকাতি সংঘটনের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
গোয়েন্দা তথ্যের প্রেক্ষিতে অদ্য ১০ সেপ্টেম্বর রাত ২টা ১০মিনিটের দিকে র্যাব-১৫ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল বর্ণিত স্থানে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, এসময় জলদস্যু দলটি র্যাবের অভিযানিক দলের উপস্থিতি বুঝতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টাকালে কুখ্যাত জলদস্যু সর্দার মঞ্জু’সহ চক্রের ৭ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়৷
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে ধৃত জলদস্যুদের হেফাজত হতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ৩টি দেশীয় তৈরী বন্দুক, ৪ রাউন্ড কার্তুজ, ৩ রাউন্ড এ্যামুনিশন, ২টি কিরিচ, ২টি সুইচ গিয়ার চাকু, ২টি টর্চ লাইট এবং ৭টি বাটন মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
আটককৃত ১. মো. মঞ্জুর আলম মঞ্জু মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোন ইউনিয়নের সোনাদিয়া এলাকার মৃত বাহাদুর মিয়ার ছেলে, ২. মো. বাহার উদ্দিন বাহার মাহবুব চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার ছনুয়া ইউনিয়নের ছনুয়া এলাকার আবু তাহেরের ছেলে, ৩. মকছুদ আলম কুতুবদিয়া উপজেলার আল আকবর ডেইল ইউনিয়নের কালুয়ার ডেইল এলাকার মৃত সামছুল আলমের ছেলে, ৪. মো. তোফায়েল পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়া এলাকার মৃত সৈয়দুল করিমের ছেলে, ৫. মো. দিদার চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পূর্ব মহাজের পাড়া এলাকার বদিউল আলমের ছেলে, ৬. ইকবাল হোসেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার তেহমনি এলাকার মৃত ইছহাক এর ছেলে ও মোহাম্মদ রাশেদ সদর থানার পৌরসভার কুতুবদিয়াপাড়ার ইয়ার মোহাম্মদ এর ছেলে৷
আটক জলদস্যুদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, আটক মো. মঞ্জুর আলম মঞ্জু একজন কুখ্যাত জলদস্যু সর্দার। কক্সবাজার অঞ্চলে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত জেলে সম্প্রদায় ও অন্যান্যদের নিকট আতংকের অপর নাম মঞ্জু ডাকাত। জলদস্যু দলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মঞ্জু ডাকাতের নেতৃত্বে আটককৃত জলদস্যু ডাকাত দলটি প্রায় ৮-১০ বছর যাবত জলদস্যুতাসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে। তারা প্রতি এক থেকে দুই সপ্তাহ পরপর নদী ও সাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেদের অস্ত্র-শস্ত্রের ভীতি প্রদর্শনসহ ট্রলারে ডাকাতি করে থাকে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জলদস্যু সর্দার মঞ্জু সরাসরি সমুদ্রে না গিয়েও জলদস্যুতার কাজে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে এবং তার পরিকল্পনা মোতাবেক ট্রলারে ডাকাতির ঘটনাগুলো সংঘঠিত হয়। তার অনুপস্থিতিতে চক্রের ২য় কমান্ড হিসেবে ডাকাত মাহাবুব জলদস্যু দলটির নেতৃত্ব দিয়ে থাকে বলে জানা যায়।
গত রাতে জলদস্যু দলটি একত্রে সমবেত হয়ে পরস্পর জ্ঞাতসারে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ডাকাতির পরিকল্পনায় বরাবরের মতো প্রধান ভূমিকায় ছিল এই মঞ্জু ডাকাত। সিডিএমএস যাচাইয়ান্তে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে কক্সবাজারের সদর ও মহেশখালী থানায় ৯টির অধিক মামলা সংক্রান্তে তথ্য পাওয়া গেছে বলে র্যাব জানান৷
আটকককৃত মো. বাহার উদ্দিন বাহার মাহবুব জলদস্যু ডাকাত দলের উপ-প্রধান ও অন্যতম পরিকল্পনাকারী এবং সমুদ্রে ডাকাত দলের নেতৃত্ব দানকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে মকছুদ ডাকাত দলের জনবল সরবরাহকারী ও মোহাম্মদ রাশেদ জলদস্যু দলকে নৌকা সরবরাহ করে অপরাধ কার্যে সহায়তা করে থাকে।
এছাড়া তারা সবাই সমুদ্রে ডাকাতির কাজে সরাসরি অংশগ্রহণও করে। সিডিএমএস যাচাই করে জানা যায় যে, ডাকাত মাহবুব এর বিরুদ্ধে ৩টি, মকছুদ আলম এর বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে।
আটককৃত আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলে র্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক আবু সালাম চৌধুরী জানান৷
এআরএস