মহাদেবপুরে কদবেলের বাগান করে সফল হাজী খোরশেদ

কাজী সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩, ১১:৩০ এএম
মহাদেবপুরে কদবেলের বাগান করে সফল হাজী খোরশেদ

নওগাঁর মহাদেবপুরে এই প্রথম দৃষ্টিনন্দন কদবেলের বাগান করে সফল হয়েছেন চাষি হাজী খোরশেদ আলম। তার বাগানের ৪৫০টি কদবেলের গাছে গাছে এখন অসংখ্য কাঁচা বেল শোভা পাচ্ছে। পাইকাররা আসছেন বেল পাকার আগেই পুরো বাগানের বেল কিনে নিতে। উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের শেরপুর হোসেনপুর গ্রামে গড়ে তুলেছেন এই বেলের বাগান। 

সরেজমিনে মহাদেবপুর-নজিপুর পাকা সড়কের মহিষবাথান মোড় থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে পাকা সড়ক ধরে এগুলেই উত্তরপাশে তার বিশাল বাগান। ওই বাগানেই কথা হয় তার সাথে। 

জানালেন, একজন জাত কৃষক তিনি। এমন কোন ফসল নাই যে তিনি ফলাননি। আখ, বেগুন, ঝাল, টমেটু, পিঁয়াজ কোনটাই বাদ দেননি। কিন্তু প্রায় সব ফসলেই মার খেয়ে অর্থাৎ লস হওয়ায় তিনি এমন কিছু খুঁজছিলেন, যার রোগ রালাই কম, কম পরিচর্যায় ফসল পাওয়া যায়। সবশেষে করেছেন আম বাগান, টক বড়ই বাগান, দার্জিলিংয়ের কমলার বাগান। অবশেষে পেয়ে যান এই কদবেলের বাগান করার পরিকল্পনা। সতীর্থদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে আড়াই বছর আগে চারা আনতে যান নাটোরে। সেখানে পেয়েও যান ড্রাফটিং করা চারা। ৪৫০টি চারা এনে লাগান এই হোসেনপুরে। এখানে তার সাত বিঘা জমি। এর চার বিঘায় লাগিয়েছেন কদবেলের চারা। আর বাকি তিন বিঘায় লাগিয়েছেন দার্জিলিংয়ের কমলার ৩৫০টি চারা। চারা লাগানোর সময় জমিতে প্রয়োজনীয় সার পাউস দিয়ে উর্বর করে তৈরি করতে হয়েছে। আগাছা পরিস্কার করতে হয় প্রায়ই। প্রয়োগ করতে হয় কীটনাশক। বাগান পরিচর্যা করার জন্য সারাবছরের শ্রমিক নিয়োগ করা আছে।

খুব অল্প সময়েই চারাগুলো বাড়তে শুরু করে। মাত্র আড়াই বছরেই বেল ধরে। এখন গাছে গাছে শুধু বেল আর বেল। আর কিছুদিনের মধ্যেই পুরোপুরি তোলার উপযোগী হবে বেলগুলো। বেলের ফলন দেখে খুব খুশি তিনি। তিনি জানান, এখন বাজারে কদবেলের আমদানী খুব কম। আর এই কারণে এর কদরও বেশি, দামও বেশি। এটি ভিটামিন সি এর আধার। একটি ওষধি পণ্য। এটি টক জাতীয় ফল হওয়ায় আচার, জ্যাম, জেলি বানানোর জনপ্রিয় উপাদান। এগুলো বাজারজাতকরণে কোন সমস্যা হবে না বলেও জানান তিনি। ইতোমধ্যেই কয়েকজন পাইকার পুরো বাগানের বেল কিনে নিতে এসেছিলেন। দাম একটু বেশি পাওয়ার জন্য একটু দেরি করছেন তিনি। 

হাজী খোরশেদ আলম জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। বাগান এলাকাতেই পাওয়া গেলো উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নাঈম আলীকে। তিনি জানালেন, প্রায়ই তিনি এই বাগানে আসেন। উৎপাদিত বেলের বাজারজাতকরণে দেশের সব ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে ভালো দামের ব্যবস্থা করা হবে। বাগান মালিককে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে একটি ফুট স্প্রে মেশিন দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় এই বাগানের পরিচর্যা, আগাছা দমন ও পোকা দমনে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। হাজী খোরশেদ এই বাগান তৈরি করতে ব্যাপক পরিশ্রম করেছেন। প্রচুর টাকা খরচ করেছেন। এখন এর সুফল পাবেন। তিনি এই বাগানের কমলার চারা আনতে সুদুর দার্জিলিংয়ে গিয়েছেন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা কাজী রেজাউল ইসলাম জানান, এই বাগান এলাকার মানুষকে দারুণ উৎসাহীত করেছে। হাজী খোরশেদ আলমের দেখাদেখি অন্যরাও এই বাগান তৈরি করবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এই বাগানের কথা জানিয়েছেন সাংবাদিকদের। তিনি বলেন, কদবেলের বাগান কৃষি বিভাগের একটি অতি আলোচিত প্রজেক্ট। এটির উন্নয়নে তারা সব সময় তৎপর। কদবেলের বাজারজাতকরণেও সর্বোত সহযোগিতা করবেন বলেও জানান তিনি।

আরএস