‘সাকা চৌধুরী যুদ্ধাপরাধী ছিল না’, ‘গোপালগঞ্জ বল্লেই প্রকল্প পাশ’ এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করা চট্টগ্রাম বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) পরিচালক রফিকুল হায়দারের শেষ কর্মদিবস আগামীকাল বুধবার। শেষ কর্মদিবসে রফিকুল হায়দারের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারিরা বিভক্ত। নিজেদের স্বাধীনতার স্ব-পক্ষের শক্তি ঘোষণা দিয়ে একটি পক্ষ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পর রফিকুল হায়দারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের(বিএফআরআই) পরিচালক রফিকুল হায়দারের বিরুদ্ধে নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ১৯টি গবেষণার ব্যয় এক কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার দুর্নীতি নিয়ে দৈনিক আমার সংবাদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গড়ে প্রতিটি গবেষণার জন্য ব্যয় ধরা হয় ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৯ জুন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শামিমা বেগমকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে ৬টি গবেষণা সম্পন্ন হয়নি বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। যাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬০ লাখ টাকা।
এদিকে নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের কর্মকর্তা দাবি করে বিএফআরের ক’জন কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘যে কোন মুহুর্তে রফিকুল হায়দার দেশ ত্যাগ করতে পারেন। তাই তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার না করা, দুর্নীতিগ্রস্ত ও মামলা খাওয়া ব্যক্তিকে কোন বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হবে না। যারা দিবে তাদের প্রতিহত করা হবে।’
চট্টগ্রাম বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. হাসিনা মরিয়ম বলেন, ‘আমি আগামীকাল বুধবার অফিসে থাকবো না। তার বেফাঁস মন্তব্যে আমরা ক্ষুব্ধ। তার বিদায় অনুষ্ঠান কেউ করছে কিনা আমি জানিনা। আমরা সকলে চাই তার শাস্তি হোক।’
তবে বিএফআরআই পরিচালক রফিকুল হায়দার তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, ‘আমি অবসরে যাচ্ছি, এ নিয়ে খোঁচাখুঁচির প্রয়োজন কি। আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে মন্ত্রণালয়, এই সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। আদালতে মামলা হয়েছে। মামলায় আমি দোষীসাব্যস্ত হলে শাস্তি ভোগ করবো। আমি দেশের সন্তান দেশে থাকবো। দেশ ত্যাগ করবো না।’
উল্লেখ্য, বিএফআরআই পরিচালক রফিকুল হায়দার যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাফাই গেয়ে একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। ভাইরাল হওয়া ৪৪ সেকেন্ডের ওই অডিওতে শোনা যায়, সাকা চৌধুরী ‘যুদ্ধাপরাধী ছিল না, তার এলাকায় যাও খবর নাও। তার একটাই দোষ হাসিনাকে আঘাত করছে সংসদে দাঁড়িয়ে।’
এমন মন্তব্যের জেরে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সোহরাব হোসাইন বাদী হয়ে গত ১ জুন তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে (ডিএসএ) মামলা করেন। এছাড়া আরেকটি মন্তব্যের অডিওতে সচিবদেরকে হেয় করার পাশাপাশি গোপালগঞ্জের প্রতি প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য প্রদানের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এআরএস