মসলা গলতে দেরি হওয়ায় কাজের মেয়ের মাথা ফাটালো প্রবাসীর স্ত্রী

কিশোরগঞ্জ (ভৈরব) প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩, ০৬:৫১ পিএম
মসলা গলতে দেরি হওয়ায় কাজের মেয়ের মাথা ফাটালো প্রবাসীর স্ত্রী

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কলি বেগম(১৭) নামে এক কাজের মেয়েকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে আমেরিকা প্রবাসী রুমি মিয়ার স্ত্রী নাবিলা বেগমের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, দীর্ঘ ৯ মাস আগে ৫ বছরের মৌখিক চুক্তিতে এতিম মেয়েটিকে নিজ বাসায় কাজ করার জন্য নিয়ে আসেন অভিযুক্ত নাবিলা বেগম। বিনিময়ে তাকে দেয়া হতো মাসে এক হাজার টাকা। সামান্য ভুল হলেই কাজের মেয়ে কলির উপর চলতো অমানুষিক নির্যাতন। কলি বেগমের মা বাবা কেউ বেঁচে নেই। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার শারফিন বাজার গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত দুলাল মিয়া।

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলির উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে শহরের চন্ডিবের দক্ষিণপাড়ার আমেরিকা প্রবাসীর স্ত্রী নাবিলা বেগম। অতিরিক্ত নির্যাতনে কলির শরীর ও মাথায় মারাত্মক জখম হওয়ায় পাশ্ববর্তী বাড়ির রায়হান মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে পাঠানো হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

নির্যাতনের কথা গোপন রেখে রায়হান কর্তব্যরত চিকিৎসককে বলেন, সিঁড়ি থেকে পড়ে এঘটনা ঘটেছে। শরীরের আঘাতের আলামত পেয়ে ভুক্তভোগী কলির কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন নির্যাতনের রোমহর্ষক বিবরণ।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আহত কলি বেগমের মাথায় সেলাই ও হাতে ব্যান্ডেজ করা হচ্ছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

চিকিৎসার সময় অসহায় কলিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা রায়হান নামে ওই ব্যক্তি পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রায়হান মিয়া জানায়, অভিযুক্ত নাবিলা বেগম তাকে দিয়ে মেয়েটিকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এবং বলেছে মেয়েটি সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছে। এসময় রায়হান মিয়া মেয়েটিকে নাবিলার বাসায় নিয়ে যেতে চাইলে মেয়েটি ভয়ে বাসায় যেতে রাজি হয়নি। এঘটনা জানতে রায়হান মিয়াকে নাবিলা বেগমের ফোন নাম্বার চাইলে ভয়ে সে এ প্রতিনিধিকে নাম্বার দেয়নি।

কলি বেগম জানায়, প্রতিদিনই তাকে কোননা কোনভাবে নির্যাতন করতো নাবিলা বেগম। শুক্রবার দুপুরের দিকে মাংস রান্নার জন্য ফ্রিজ থেকে মশলা নামাতে বলে। সে মশলা নামায়। তবে মসলা গলতে দেরি হওয়ায় তাকে চুলের মুঠি ধরে মারধর এবং রান্নাঘরের লোহার খনতি দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখমসহ করে প্রবাসীর স্ত্রী নাবিলা।

কলি জানায়, সে আর ওই বাসায় কাজ করতে চায় না। নির্যাতনকারী মহিলা নাবিলার শাস্তি ও বিচার দাবি করে কিশোরী কলি।

এবিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রওশন আরা নিপা বলেন,  আজ দুপুরে পৌণে একটার দিকে এক ব্যক্তি কলিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি দিয়েছি। মাথায় তিনটি সেলাই লেগেছে। হাতে ও শরীরের ইনজুরি রয়েছে। কলির কাছ থেকে জানতে পারি সে যে বাসায় কাজ করতো। সে বাসার নাবিলা বেগম তাকে প্রায়ই নির্যাতন করতো। আজও তাকে নির্যাতন করে গুরুতর আহত করেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, হাসপাতালে গিয়ে কিশোরী মেয়ের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এআরএস