স্কুল ভবনের নির্মাণকাজ শেষের আগেই ছাদ চুইয়ে পড়ছে পানি

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৩, ১২:২৪ পিএম
স্কুল ভবনের নির্মাণকাজ শেষের আগেই ছাদ চুইয়ে পড়ছে পানি

এক বছর আগে ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এখনো ভবন হস্তান্তর করা হয়নি। এর আগেই কাজ সম্পন্ন হওয়া ছাদ চুইয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি। চুইয়ে পড়া জায়গা স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। কিছু স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে এগুলো ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এই চিত্র সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের সোনালী চেলা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা নতুন ভবনের।

ভবন নির্মাণে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠেছে। অথচ বিদ্যালয়ের নতুন এই ভবন নির্মাণে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বড় ধরণের অনিয়ম না হলে ঢালাই ও রুফ টাইসল ভেদ করে বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ার কথা নয়। এমনটি বলছেন সোনালী চেলা  উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

তারা জানিয়েছেন, ঢালাই  কাজ শেষে পানি চুইয়ে পড়ার বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নজরে আনলেও তারা আমলে নেয়নি। স্কুলের ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই সামান্য বৃষ্টিতে একাধিক স্থান থেকে চুঁইয়ে পানি পড়ছে ।

অভিযোগ উঠেছে ভবনের বেইজ ঢালাই, বিম ঢালাই, ছাদ ঢালাইসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে সার্বক্ষণিক তদারকির নিয়ম থাকলেও সাইটে থাকেনই না ইন্জিনিয়ার। এতে ঠিকাদাররা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ পায়। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ভবনের বিমে ফাটল, ছাদ চুঁয়ে পানি পড়া, ফিটিং সঠিক না হওয়া,ছাদে ফাটল ধরা, পলেস্তারা উঠে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। সঠিক তদারকির অভাবে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের সোনালী চেলা উচ্চবিদ্যালয় ভবন নির্মাণের শেষদিকে নিম্নমানের  সামগ্রী দিয়ে দায়সারা কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্কুল  কর্তৃপক্ষের।

স্থানীয়রা বলছে অবহেলিত বৃহত্তর নাছিমপুর  এলাকার মানুষের দীর্ঘ আশা আকাঙ্ক্ষা ফসল সোনালী চেলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজে অনিয়ম হলেও কেউ দেখার নেই। এদিকে, একাডেমিক ভবনের কাজের শুরুতেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার আর নানা অনিয়মের অভিযোগে কয়েকবার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির লোকজন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের একাধিক বাঁধা নিষেধের পরও বন্ধ হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম। একের পর এক কাজে অনিয়ম আর দুর্নীতির কোন শেষ নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের অধীনে ২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল সোনালী চেলা উচ্চবিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় সিলেটের বিয়ানীবাজারের আশা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত দেড় বছর সময়ে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও ৪ বছরে ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ায় বিঘ্নতা ঘটছে। প্রত্যন্ত এই অঞ্চলের মানুষদের শিক্ষা ব্যবস্থার একমাত্র প্রতিষ্ঠান সোনালী চেলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ তলা ভবন নির্মাণকে ঘিরে ১৫ গ্রামের কয়েক হাজার  শিক্ষার্থী এক নতুনদিগন্তের স্বপ্ন দেখছে। তবে ভবনের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ছাঁদ চুইয়ে পানি পড়াসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নানান টালবাহানায় কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার অতিরিক্ত আরও  আড়াই বছর পেরিয়ে গেলে এখনও কাজ চলছে ধীর গতিতে। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খামখেয়ালী দায়সারা ভাবে প্রতিষ্টানটির নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে শুরু থেকেই কাজের গুণগত মান নিয়ে সর্বমহলে প্রশ্ন উঠে। কাজের মানের বিষয়ে কোনো কথা বললেই স্থানীয় লোকজনদের হুমকি ও ভয় দেখায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। একদিকে যেমন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়সারা কাজ, অন্যদিকে তেমনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয় নির্মাণ কাজের তদারকির অবহেলা।

সোনালী চেলা উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আপ্তাব উদ্দিন মেম্বার জানান, ২ কোটি ৯০ লাখ টাকার ৪ তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ছাদ চুঁইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। কাজের অনিয়মে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। ফাটলসহ ভবনের নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে।

অনিয়ম দেখে  কয়েকবার কাজে বাঁধা দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা আমলে নেয়নি।

ইসলামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হেকিম জানান, সোনালী চেলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতি হচ্ছে। সরকারের এতো টাকা  জলে ভেসে যাচ্ছে। দেড় বছরের কাজ ৪ বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবুও নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায়র আগে ছাঁদ চুইয়ে পানি পড়ছে।

আশা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার এবাদ উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি বিয়ানীবাজার উপজোলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। স্কুল ভবনের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তাই একটু অসুবিধা হতে পারে। কাজ শেষ হওয়ার পর দেখে আসবেন।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, তদারকির দায়িত্বে থাকা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের অবহেলার বিষয়টি দেখা হবে। তবে পানি চুইয়ে পড়েছে এটা আমাকে প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ অবগত করেন নাই। এরপরও যদি কাজে ত্রুটি  থাকে অবশ্যই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় কাজ সঠিকভাবে করে দিতে হবে। ত্রুটিগুলো সংশোধন না করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এআরএস