এক মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে লন্ড ভন্ড ৬ গ্রাম

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৩, ১২:৩৯ পিএম
এক মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে লন্ড ভন্ড ৬ গ্রাম

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় এক মিনিটের স্থায়ী ঘূর্ণিঝড়ে দুইটি ইউনিয়নের অন্তত ৬টি গ্রামের শতাধিক কাচা-পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে উপড়ে পড়েছে কমপক্ষে তিনশতাধিক গাছপালা। এছাড়া বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে ওই পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকেই খোলা আকাশের নিচে ও আশপাশের বাড়ি-এলাকায় অবস্থান নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল সোয়া তিনটার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও টগরবন্ধ ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। তবে প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের নাম,পরিচয় ও তালিকা পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় ও প্রশাসন সুত্রে জানাগেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারাদিন ধরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। দুপুর সোয়া তিনটার দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ধেয়ে আসা এই ঘূর্ণিঝড় মাত্র এক মিনিটেরও কম সময় স্থায়ী ছিল। তাতেই উপজেলার সদর ইউনিয়ন বিদ্যাধর, ব্রাহ্মণ-জাটিগ্রাম, বেজিডাঙ্গা ও টগরবন্ধ ইউনিয়নের মালা, কৃষ্ণপুর-টগরবান, তিতুরকান্দি গ্রামের কাচা-পাকা বাড়িঘর, গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফসলি জমিও নষ্ট হয়েছে।

সদর ইউনিয়নের বিদ্যাধর গ্রামের ইউপি সদস্য মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকেই সারাদিন ধরে প্রচন্ড বৃষ্টি। বিকেলের দিকে হঠাৎ করে এক মিনিটের মতো সময়ে ঘুর্ণিঝড়ে আমাদের ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের ২০ থেকে ৩০ টি কাচা-পাকা ঘরবাড়ি গাছপালা ভেঙ্গেচুরে উপড়ে ফেলে। এর আগের থেকেই বিদ্যুৎ বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নের তিন গ্রামের বেশকিছু পরিবারের বড়বাড়ি গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমার পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাড়ানো ও সহায়তার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে টগরবন্ধ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বেগম বলেন,খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে গিয়ে সাধ্যমতো সহোযোগিতার চেষ্টা করা হয়। টগরবন্ধ ইউনিয়নে তিনটি গ্রামের ৬০ থেকে ৭০ টি কাচাপাকা বাড়িঘর ও কয়েকশত গাছপালা ভেঙ্গে চুড়ে উপড়ে পড়ে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের পল্লী বিদ্যুত সমিতির আলফাডাঙ্গা সাব জোনাল অফিসের এজিএম ফাহিম হাসান বলেন, আলফাডাঙ্গার পুরো উপজেলা নয়। ঘুর্ণিঝড় বয়ে যাওয়া দুইটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের তিনটি খুটি ভেঙে পড়ে গেছে। আরো অনেকগুলো আঁকা বাকা হয়ে পড়েছে। আমাদের অফিসের লোকজন কাজ করছে। আশাকরি আগামী কালের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) রফিকুল হকের  মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল নাম্বারটা বন্ধ পাওয়া যায়।

এর সত্যতা নিশ্চিত করে আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, সারাদিনই প্রচন্ড বৃষ্টি। বিকেলের দিকে মাত্র এক মিনিটেরও কম সময়ের মতো ঘূর্ণিঝড়ে দুই উপজেলার ৬ টি গ্রামের প্রায় শতাধিক কাচাপাকা বাড়িঘর ভেঙে লান্ড ভন্ড হয়ে গেছে। এছাড়া কমপক্ষে তিন শতাধিক  গাছপালা ভেঙ্গেচুড়ে উপড়ে পড়ে। খবর পেয়ে উদ্ধারকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। বৃষ্টির মধ্যে ভিজে উদ্ধার কাজ করা হয়। তবে এখন অসম্পূর্ণ রয়েছে। ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিক হতে হয়তো তিন থেকে চার দিন সময় লাগতে পারে।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই ঘরবাড়ি ছাড়া খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেন। তাদের নিরাপদ স্থান ও আশপাশের এলাকায় অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। পুরো এলাকা জুড়ে অন্ধকার। আগামীকাল সকালে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাড়ানোসহ তালিকা করা হবে। প্রাথমিকভাবে কারো নাম পরিচয় জানানো সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক(ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। হঠাৎ করে ঘুর্ণিঝড়টি রুপ নেয়। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করছে। আগামীকাল সকালে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার কথা বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।

এআরএস