গাইবান্ধার রামচন্দ্রপুরে সড়কের বেহাল দশা; সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে হাঁটু সমান কাদা!

গাইবান্ধা প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৩, ০৩:৫৬ পিএম
গাইবান্ধার রামচন্দ্রপুরে সড়কের বেহাল দশা; সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে হাঁটু সমান কাদা!

গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের আরিফ খাঁ বাসুদেবপুর গ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। সামান্য বৃষ্টি হলেই এ রাস্তাটি  চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। সদর উপজেলার শেষ সীমানায় এই গ্রামটির অবস্থান হওয়ায়া সামন্য বৃষ্টিতে রাস্তায় কাদা হলেই বাধ্য হয়েই এখানকার মানুষদের তিন কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে পার্শ¦বর্তী পলাশবাড়ী উপজেলা দিয়ে যেতে হয় এতে করে চরম দূর্ভোগে পরেছে এখানকার সাধারন মানুষ। 

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার আরিফ খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প কোনো পথের ব্যবস্থা না থাকায় হাঁটু সমান কাদা মাড়িয়েই চলাচল করতে হয় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, বৃদ্ধসহ অন্যান্য সবার। সারা বছরের প্রায় ৫/৬ মাস ভোগান্তির শিকার হতে হয় গ্রামবাসীদের। 

বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এ রাস্তা দিয়ে চলতে ধিগয়ে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হয় তাদের। বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান কাঁদা-পানির সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানি ও মাটি মিশে কাদায় একাকার হয়ে যায় পুরো রাস্তা। এতে বিপাকে পড়েন ওই এলাকার পাচ থেকে দশ হাজারের অধিক মানুষ। এই এলাকার মানুষের আতঙ্ক ও ভয়ের আরেক নাম বৃষ্টি। কাদার জন্য গ্রামের এ রাস্তায় কোনো অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, ভ্যান-রিকশা ঢোকে না। 

মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলে তো দূরে থাক, খালি পায়ে হেঁটে চলাচল করাও দায়। বৃষ্টির দিনে গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্সও এখানে ঢুকতে পারে না। অনেক সময় কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে কাঁধে করে কর্দমাক্ত রাস্তা পার করা হয়। 

স্থানীয় বাসিন্দা , শাকিল, খোরশেদ আলম, ইউনুস আলী বলেন আমাদের দুঃখ-কষ্ট, দুর্ভোগের কথা কেউ শুনে না। আমাদের ভোগান্তির কথা বলে বোঝানো যাবে না, নিজ চোখে দেখতে হবে। আমরা ঠিকমতো হাটবাজারে যেতে পারি না। কৃষিপণ্য সময় মতো বিক্রি করতে পারি না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা কষ্ট করে স্কুল-কলেজে যায়। বিশেষ করে বৃষ্টি-কাদার দিনে জুতা স্যান্ডেল হাতে নিয়ে দুই কিলোমিটার কাদা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। আর কত কাল এ কষ্ট করতে হবে কে জানে।

ওই গ্রামের মো. আব্দুল গাফফার মোল্লা, মো. বাবুল হোসেন বলেন, এলাকায় প্রচুর কৃষি ফসল উৎপাদন হয়। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণে কৃষকরা সময়মতো পণ্য বাজারজাত করতে পারেন না। ফলে সফলের ন্যায্য ম‚ল্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়। সামান্য বৃষ্টি হতে না হতেই রাস্তার পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কি করে চলাচল করব আমরা কিছুই বুঝে পারি না। শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এখানে বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী আছে তাদের এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে যেতে হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো ফল হয়নি সবশেষ চেয়ারম্যানের কাছে কাদা অংশগুলোতে কয়েকগাড়ি রাবিশ চেয়োও পাইনি। তাদের কাছে অনুরোধ আমাদের এই রাস্তার দিকে একটু নজর দেওয়ার জন্য। এদিকে ৬ নং রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাব্বির হোসেন জানান, এ রাস্তার কাজ করা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও এলজিইডিতে দরখাস্ত দিয়েছি।

গাইবান্ধা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সুত্র জানায় ,পরিচিতি (আইডি নম্বর) তালিকায় না ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ এসব রাস্তা পাকা হয়নি। এলজিইডি অফিস থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত গাইবান্ধায় এলজিইডির আওতায় ১ হাজার ১৫৭টি রাস্তার আইডি নম্বর নেই । এসব রাস্তার মোট দূরত্ব ১ হাজার ৬৬৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে শুধু গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৪৫৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৩০৬টি রাস্তা রয়েছে, যেগুলো সম্পূর্ণ কাঁচা। আইডি নম্বর না থাকায় এসব রাস্তা পাকাকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না । 

এলজিইডির জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম বলেন, গত বছর গাইবান্ধার ১ হাজার ৬৬৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ১ হাজার ১৫৭টি রাস্তার তালিকা আইডির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আইডি হয়ে গেলে কাঁচা রাস্তাগুলো পাকা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করে সাধারন মানুষের চলাচলের উপযোগি করতে কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন এখান এলাকাবাসী।

আরএস