যশোরের চৌগাছায় ৪৯টি মন্ডপে চলছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। শারদীয় দুর্গোৎসবের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী শেষ মুহূর্তে চলছে মা দুর্গার সাজসজ্জার কাজ। সনাতন ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গা পূজা। প্রতিমা তৈরিতে শিল্পীদের ব্যস্ততায় জানান দিচ্ছে দেবী দূর্গার আগমনী বার্তা। সারা দেশের মতো চৌগাছা উপজেলায় চলতি বছর ৪৯টি মন্ডপে শারদীয়া দুর্গা পূজার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। দুর্গোৎসব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবম্বীদের মধ্যে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে ।
উপজেলা পূজা কমিটি দেওয়া তথ্যে জানা যায়, এ বছর উপজেলার ফুলসার ইউনিয়নে ৩টি, পাশাপোল ইইনিয়নে ২টি, সিংহঝুলি ইউনিয়নে ৩টি, ধুলিয়ানীতে ১টি, নারায়নপুর ইউনিয়নে ২টি, সুখপুকুরিয়ায় ৭টি, স্বরুপদাহে ৭টি, চৌগাছা সদর ইউনিয়নে ৫টি, পাতিবিলায় ৪টি, হাকিমপুরে ৩টি, জগদিশপুর ইউনিয়নে ৫টি ও পৌর শহরে ৭টি মোট ৪৯ টি মন্ডবে শারদীয়া দুর্গা পূজা হবে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী ও অস্থায়ী এসব সার্বজনীন পূজা মন্ডপ তৈরি করে (প্রতিমা তৈরী) পূজার প্রস্তুতি চলছে। প্রতিমা তৈরিতে ভাস্কারদের কল্পনায় দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে রং তুলির কাজ। বেশকয়টি মন্ডপে চলছে ভাস্কারদের শেষ তুলির আচড় দিয়ে প্রতিমা সাজসজ্জার কাজ। ভাস্কারদের নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় কৃত্রিম জীবন পাবেন দেবী দুর্গা, শিব, ল²ী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুরসহ অন্যান্য প্রতিমা। এছাড়া কোনো কোনো প্রতিমায় আবার পরানো হচ্ছে শাড়ি, হাতের বালাসহ অন্যান্য গয়না। এরপর ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি আর আরতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে পূজা মন্ডপগুলো। পাশাপাশি আলোক সজ্জা, প্যান্ডেল তৈরি, মন্ডপ ও তার আশপাশে সাজসজ্জার কাজসহ নানা কাজেও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন পূজা কমিটির লোকজন। পূজায় শহরের দোকান-পাটে ভিড় করছে পূজার নতুন জামা-কাপড় কেনাকাটা করতে আসা নারী-পুরুষসহ সকল বয়সের মানুষ।
উপজেলার খড়িঞ্চা গ্রামের ভরত হালদার বলেন, মহা চন্ডীতে উল্লেখ আছে ত্রেতা যুগে ভগবান রাজা রাম চন্দ্র দশানন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে রত হন। পাপের বিনাশের লক্ষ্যে দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎ কালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সীতাকে উদ্ধার করেন ও রাবণকে হত্যা করতে সক্ষম হন রাম চন্দ্র। সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতি বছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বরা দূর্গোৎসব পালন করে আসছেন।
তিনি বলেন, আগামী ২০ অক্টোবর শুক্রবার দেবী পক্ষের ষষ্ঠি তিথিতে বোধন তলায় মঙ্গল ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শারদীয়া দুর্গা দেবীর এই উৎসব শুরু হবে।সেই সাথে ২৪ অক্টোবর মহাবিজয় দশমীতে দেবী দুর্গা প্রতিমা বির্ষজনে উৎসবের সমাপ্তী ঘটবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্রানুযায়ী চলতি বছর দেবী দুর্গার আগমন হবে ঘোড়ায় চড়ে। আর পালকিতে চড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন।
পৌর শহরের কালিতলা মন্দিরে কর্মরত ভাস্কার মহেন্দ্র জানান, চলতি বছর তার পাঁচজনের টিম মিলে বিভিন্ন এলাকায় ৫টি মন্ডপে প্রতিমা তৈরি করছেন। প্রতিমা তৈরিতে সবখানে মাটির কাজ শেষে রং-তুলি দিয়ে চলছে প্রতিমা সাজসজ্জার কাজ। এতে তারা প্রায় দুই লাখ টাকা পাবেন। বিভিন্ন মালামালে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রতিমা তৈরিতে খরচ অনেকটা বেড়েছে।
উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ বলাই চন্দ্র পাল জানান, চলতি বছর মোট ৪৯টি পূজা মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে। সরকারি ভাবে প্রত্যেক মন্ডপে ৫শ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার জন্য টিয়ার কমিটি রয়েছে। এছাড়া মন্দিরের বাইরে সব ধরনের আলোকসজ্জা, সাজসজ্জা, মেলার আয়োজন, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ আরও অনুষ্ঠান থাকবে। সা¤প্রদায়িক স¤প্রতি বজায় রেখে সবাই মিলে মিশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব পালন হবে।
চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, দুর্গাপূজায় যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় তার জন্য পুলিশ প্রশাসন তৎপর। শান্তিপূর্ণ ভাবে দূর্গোৎসব পালনের লক্ষে উপজেলার পূজা মন্ডপগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে পুলিশ, ব্যাটিলিয়ান আনসার, সাধারণ আনসার ও গ্রামপুলিশসহ মোবাইল টিমের সদস্যরা মোতায়ন থাকবে।
আরএস