ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নারুই গ্রামে শিল্পপতি রিপন ও তার বাহিনীর হামলায় পঙ্গুত্ব বরণসহ গ্রাম ছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শত শত মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, দেশের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজস্ব আদালতে বিচারের ব্যবস্থা ও সেই বিচারের শাস্তি প্রদান করছে রিপনের সন্ত্রাসী বাহিনী।
জানা যায়, এখন প্রায় প্রতিদিনই নারুই ও এর আশপাশের গ্রামের মানুষকে পিটিয়ে আহত ও পঙ্গু করে দিচ্ছে রিপন বাহিনী। তার ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে শতশত মানুষ। এলাকা ছেড়ে আপনজনদের নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই এলাকার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও। স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে যে কোন ধরনের দ্বন্দ্ব অথবা সমস্যা তৈরি হলে সেই সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার নামে নিজস্ব আদালত বসিয়ে রিপন ও তার বাহিনীর লাখ লাখ টাকা জরিমানার কথা এখন সবারই জানা। সেই টাকা পরিশোধ না করলে তার উপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। তার হুকুম না মানলেই গোমুত্রের কুয়া এবং পাঙ্গাসের পুকুরে বেঁধে রেখে সাজা প্রদান করা হয়।
এছাড়া এলাকার মানুষের হাজার হাজার কানি জমি জোরপূর্বক কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রিপন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি রিপনের অপরাধ সম্রাজ্য নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে দেশজুড়ে অলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে রিপনের বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন গণকমিশন গঠন করে। তবে গণকমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখে নি।
এমনকি রহস্যজনক কারণে কোন শাস্তিও হয়নি রিপন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। উল্টো রিপন বাহিনীর অত্যাচারে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ দিশেহারা পড়েছে। অদৃশ্য শক্তির বলে রিপন আগের চেয়ে এখন আরও বেশি শক্তিশালি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন নারুই গ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত চরম অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই হুমকি ধামকি ও মারধরের ঘটনা ঘটছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রিপন মিয়ার নির্দেশে তারই নিযুক্ত গ্রাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম শান্তি মিটিং করার পরের দিন অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে রিপন মিয়ার সন্ত্রাসী বাহিনীকে দিয়ে নারুই গ্রামের মুতিউল্লাহ গোত্রকে গ্রামছাড়া করার জন্য আক্রমণ করে। মুতিউল্লাহ গোত্রের লোকজন প্রাণভয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে গিয়ে জীবন রক্ষা করেন।
২৫ সেপ্টেম্বর রাতে মুতিউল্লাহ বাড়ির মরহুম ফুলমিয়ার ছেলে ফারুককে রাস্তায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে বেদম মারধোর করে। ২৬ সেপ্টেম্বর মাগরিবের নামাজের পর বাজারে নারুই গ্রামের পশ্চিম পাড়ার কাজী হুমায়ুরেন ছেলে কাজী রাসেলকে বেদম মারধর করে।
২৮ সেপ্টেম্বর নারুই গ্রামের মাইজ পাড়ার মরহুম ইছু মিয়ার ছেলে আরজ মিয়াকে অন্যায়ভাবে জরিমানার আট লাখ টাকার জন্য বেদম মারধর করে অজ্ঞান করে ফেলে রাখা হয়।
২৯ সেপ্টেম্বর সকালে গ্রামের মুতিউল্লাহ বাড়ির গোলাম নবীর ছেলে সাব্বির মিয়াকে মোবারকের দোকানের মধ্যে ঢুকিয়ে শাটার ফেলে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি লাথি মেরে ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হাড়ভেঙ্গে দেয়া হয়।
৩০ সেপ্টেম্বর নারুই গ্রামের মরহুম আব্দু মিয়ার ছেলে, আশিকুল ইসলাম দারোগার ভাই ইউছুফ এবং এয়ার হোসেনের ছেলেকে বেদম মারধর করে।
একই দিনে ৩০ সেপ্টেম্বর রিপন মিয়া তার গোত্রের হামদু মিয়াকে তার মাছ ধরার সরঞ্জাম নদী থেকে তুলে নেওয়ার জন্য চাপসৃষ্টিসহ ভিটে বাড়ি ছাড়াকরার হুমকি প্রদান করলে ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার হামদু মিয়া রিপন মিয়ার অত্যাচার নির্যাতন সইনে তা পেরে মানসিক যন্ত্রণায় মারা যান।
৪ অক্টোবর মুতিউল্লাহ বাড়ির ফরিদ মিয়ার বড় ছেলে আশরাফুলকে আক্রমণ করলে সে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। ৫ অক্টোবর মুতিউল্লাহ বাড়ির ফরিদ মিয়ার ছোট ছেলে সালাউদ্দিন ও জমদ্দার বাড়ির হাজী জয়নাল আবেদীনের ছেলে এনামুলকে মার্কেটে ফেলে বেদম মারধর করে। ৯ অক্টোবর গ্রামের মৃত শিরু মিয়ার ছেলে ৬৭ বছরের বয়স্ক হোসেন ভান্ডারীকে এবং একই গোত্রের আব্দুল মালেকের ছেলে আব্দুল্লাহকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে জখম করে টাকা পয়সা মোবাইল নিয়ে যায়।
১০ অক্টোবর মুতিউল্লাহ বাড়ির মৃত কুদ্দুস মিয়ার ছেলে মজিবুর রহমানকে রাতে রাস্তায় পূর্বপরিকল্পিত ভাবে রিপন মিয়ার সন্ত্রাসী বাহিনী এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে তার দুটি পা ভেঙে দেয়। গত ১৩ দিনে উল্লেখ্যিত ব্যক্তিদের উপর এ নির্যাতন চালায় রিপন বাহিনী।
এ বিষয়ে নবীনগর সার্কেলের এএসপি সিরাজুল ইসলাম জানান, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ওই এলাকায় গতকালও বিট পুলিশিং মিটিং করা হয়েছে। আমাদের অবস্থান পরিস্কার যেই আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে; সে যতবড় শক্তিশালী হোক না কেন।
রিপন ও তার বাহিনীর বিষয়ে গণকমিশন রিপোর্ট কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে নবীনগর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা জাহান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। অচিরেই এসকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এআরএস