যাদের খবর কেউ রাখে না! নিভৃতে গোপনে সমাজ তথা মানুষের কল্যাণে তারা জীবনব্যাপী কাজ করে যায় । তারা সমাজের অবহেলিত তাদের মূল্যায়ন কেউ করে না। তবুও তারা বসে থাকে না। তারা মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মানুষের সেবা করে থাকেন। এমনই একজন সাদা মনের মানুষ লেবু মাষ্টার।
গাছের প্রতি ভালোবাসা ছাত্রজীবন থেকেই। ৪০ বছর ধরে রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বনজ, ফলদ ও ঔষধিসহ নানাজাতের গাছ রোপণ করে চলেছেন এসএম জুলফিকার আলী লেবু নামে এই শিক্ষক। বিনিময়ে তিনি নেন না কিছুই। ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই দমিয়ে রাখতে পারে না তাকে।
জানা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থানে ৩ হাজার বটবৃক্ষসহ প্রায় ৪০ হাজার অন্যান্য প্রজাতির গাছ রোপণ করেছেন। অনেক গাছ এখন বড় হয়ে ফল ও ছায়া দিচ্ছে। পথচারীদের বিশ্রামের জন্য গাছের গোড়ায় তৈরি করে দিয়েছেন পাকা মাচাও। নিজের বাড়িকেও তিনি সাজিয়েছেন নানা প্রজাতির বৃক্ষের সমাহারে।
এস এম জুলফিকার আলী (লেবু মাস্টার) জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার কে.জি.এস মহর সোবহান মফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। যাকে সবাই লেবু মাস্টার নামেই চেনেন। তিনি ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের ছবিলাপুর গ্রামের মো. আলাউদ্দিন সরকারের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, তিনি সামাজিক অনুষ্ঠানসহ শিক্ষার্থীদের যেকোনো অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে দেন চারা গাছ। এছাড়াও প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃক্ষ রোপণে উদ্বুদ্ধকরণে বৃক্ষ রোপণের সুফল সম্পর্কে আলোচনা করেন। বৃক্ষ রোপন ও পরিচর্যা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের যেমন উদ্বুদ্ধ করেন এমাথি চায়ের আড্ডায় যেখানেই মানুষের জমায়েত সেখানেই তিনি বৃক্ষরোপণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেন।
তিনি জামালপুর তথা পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রাঙ্গণে বিভিন্ন রাস্তার মোড়, খোলা জায়গায় নিরন্তর বৃক্ষরোপণ করে চলেছেন।
কে.জি.এস মহর সোবহান মফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আতিয়া ইয়াসমিন আশা বলেন, ছোটকাল থেকেই দেখছি লেবু স্যার গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় গাছ লাগিয়ে আসছেন। গ্রামের এমন কোনো রাস্তা নেই, যেখানে তার লাগানো গাছ না আছে। এমনকি তিনি আমাদের বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান খেলাধুলা, বিদায় অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগীতাসহ নানা অনুষ্ঠানে তিনি শিক্ষার্থীদের গাছ উপহার দেন।
আরেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. হিমেল বলেন, লেবু স্যার বিভিন্ন জায়গায় গাছ লাগান। পথচারীদের বসার জন্য স্যার গাছের গোড়ায় পাকা করেন এবং তৃষ্ণা নিবারণের জন্য কয়েক জায়গায় টিউবওয়েলও স্থাপন করেছেন। যেকোনো সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানেও তিনি গাছ উপহার দেন।
বৃক্ষপ্রেমী এস এম জুলফিকার আলী লেবু বলেন, অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে এই গাছ লাগানোর নেশা শুরু হয়। খেলার মাঠ, বিদ্যালয় প্রাঙ্গন, ঈদগাহ মাঠসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষ রোপন করি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ছাড়াও ক্লান্ত পথিক ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে প্রশান্তি দিতেই এ বৃক্ষরোপন অভিযান।
তিনি আরও বলেন, ৩৪ বছরের শিক্ষকতা জীবনে প্রতিটি ছাত্রের বাড়িতে তার রোপিত পরিবেশ বান্ধব গাছ রয়েছে। প্রতিদিন কমপক্ষে একটি বৃক্ষ রোপন করতে না পারলে তার রাতে ঘুম হয় না। তার ইচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় বৃক্ষরোপণ করতে পারেন। তার এই ইচ্ছে পূরণের জন্য এখন শুধু বাধা অর্থনৈতিক সমস্যা।
পরিবেশ আন্দোলন জামালপুর শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, শিল্পায়ন, নগরায়নসহ বিভিন্ন কারণে বা অকারণেও যখন অকাতরে চলছে বৃক্ষ নিধন, পরিবেশকে বিপন্ন করা হচ্ছে, সেই মুহূর্তে জুলফিকার আলী লেবু মাস্টারের বৃক্ষরোপন অভিযান নিন্দেহ প্রসংশনীয় ও অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত।
এ বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে তার এ কাজ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তিনি যদি কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাহলে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
এইচআর