ছাত্রলীগের তিন কর্মীর বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

জবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৩, ০৪:১৯ পিএম
ছাত্রলীগের তিন কর্মীর বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক নারী শিক্ষার্থীসহ দুজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী ১৫তম ব্যাচের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে তহমিনা জেরিফ মিশু এবং অপরজন একই ব্যাচের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশনের শিক্ষার্থী ছোলায়মান খান।

এ ঘটনায় বুধবার ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে পৃথক দুইটি অভিযোগ দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় গেছে, সাদেক খান, শুভ সাহা ও শরিফুল ইসলাম হিমু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম ফরাজির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অভিযুক্ত সাদেক খান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, গত ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় টিএসসির পেছনে মিশু আর তার বন্ধু ছোলায়মান চা শেষ করে কাপ দিতে যায়। তখন সেখানে বসার টুল না থাকায় এটা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাদেকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সে রাগান্বিত হয়ে কথা বলে। তখন মিশু বোঝাতে গেলে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।

ছোলায়মান থামাতে গেলে সাদেক রাগান্নিত হয়ে তেড়ে আসে। তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১২ ব্যাচের হিমু ও শুভসহ আরও ৪-৫ জন। তারা পূর্বের কোন ঘটনা না জেনেই তাদের ওপর চড়াও হয় এবং বাকবিতণ্ডা শুরু করে এবং এক পর্যায়ে মিশুকে হুমকি দেন।

এ সময় মিশুকে উদ্দেশ্য করে তারা বলে, তুই ছেলে হলে তোকে মাটিতে পিষিয়ে ফেলতাম। পরিস্থিতি খারাপ দেখে তারা স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করলে হিমু ও শুভ মিশুকে মারতে উদ্যত হয়। ছোলায়মান বাধা দিতে গেলে তার ওপর আক্রমণ করে। তাকে মারতে দেখে মিশু বাধা দিতে যায় তখন সাদেক মিশুকে আঘাত করে।

ছোলায়মান মিশুকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাদেক তাদের দুইজনকে মারতে মারতে গলি থেকে রাস্তায় নিয়ে আসে। এতে ছোলায়মান মাথায়, হাতে এবং ঘাড়ে প্রচণ্ড আঘাত পায়। ঘটনাস্থলে তার জুতা ছিঁড়ে যায় এবং চশমা পড়ে ভেঙে যায়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জেরিফ মিশু বলেন, আমাকে সবাই মিলে হাত তুলে মারতে উদ্যত হয়। আমার সঙ্গে থাকা বন্ধু আমাকে বাঁচাতে গেলে তার গায়ে গা হাত দেয় এবং ধাক্কাতে থাকে। আমি বাধা দিতে গেলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে শেষে মাটিতে পুঁতে ফেলার হুমকি দেয় এবং কিল, চড়, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। আমার বন্ধু আমাকে মারধর থেকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়।

আরেক ভুক্তভোগী ছোলায়মান খান বলেন, সাদেকসহ ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাকে টেনে হেঁচড়ে মারধর করে এবং আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এবং আমাদের ওপর হয়ে যাওয়া এমন নিকৃষ্টতম অত্যাচারের একটি বিচার হোক এবং এমন বিধ্বংসী শিক্ষার্থীদের আগ্রাসন থেকে আশ্রয় প্রদান কামনা করছি।

এ ব্যাপারে কথা বলতে অভিযুক্ত সাদেক খানকে বারবার কল দেয়া হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম হিমু বলেন, ওই মেয়ের সঙ্গে আমার কোন বাকবিতণ্ডা হয় নাই। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। আমরা ফটোকপির দোকানে গিয়েছিলাম তখন দেখি আমাদের ছোট ভাইদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হচ্ছে, আমি গিয়ে জানতে চাইলে তর্ক হয়। ওই মেয়ে সে জুনিয়র হয়ে আমাদের ওপর কয়েকবার জুতা তুলেছে। গরম চা ছিলো তা ছুরে মারছে। আমার কলার ধরছে তখন আমি সিনিয়র হিসেবে ওই ছেলেকে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে ওই মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেছি।

এবিষয়ে জবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. ইব্রাহিম ফরাজী বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে প্রক্টর অফিস থেকে আমাকে কিছু এখনো জানানো হয়নি। বিষয়টি কি হয়েছে তা দেখে জানাব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আবার অভিযোগ দিতে বলেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এইচআর