ডিসেম্বরে বাজারে আসবে মুড়িকাটা পেঁয়াজ

রাজবাড়ীতে বছরে সাড়ে ৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন

কাজী টুটুল , রাজবাড়ী প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৩, ০৬:৪১ পিএম
রাজবাড়ীতে বছরে সাড়ে ৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন

মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদনে বিখ্যাত রাজবাড়ী জেলা। সারা দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ এ জেলাতে হয়। এ জেলায় প্রতি মৌসুমে মুড়িকাটা ও হালি এ দুই জাতের পেঁয়াজের চাষ হয়। এবারও রাজবাড়ী সদর, পাংশা, কালুখালী, বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দ উপজেলায় এ জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণের ৯০ দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়।

অতিবৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ আবাদ পিছিয়ে গেলেও পদ্মা নদীর চরাঞ্চল গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী সদর, কালুখালী ও পাংশা উপজেলার চরাঞ্চলের আগাম জাত মুড়িকাটা ডিসেম্বর মাসে বাজারে আসবে। নিন্মাঞ্চলগুলোতে এখন মুরিকাটা পেঁয়াজ রোপন ও পরিচর্যা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ থাকায় ফলন ভালো ও বাজার দর এ ভাবে থাকলে লাভবান হবেন চাষিরা।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই সপ্তাহ আগে রোপণ করা মুড়িকাটা পেঁয়াজ ক্ষেত পরিচর্যায় মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। কেউ জমিতে নিড়ানি দিচ্ছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন, কেউ কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। অতিবৃষ্টির কারণে যাদের জমিতে পানি জমে ছিলো তারা কিছুদিন দেরিতে পেঁয়াজ রোপণ করছেন। পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বড় হয়ে উঠছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা এলাকার কৃষক মো. ফটিক প্রামানিক বলেন, তিনি ৩ বিঘা (৩৩ শতাংশে ১ বিঘা) জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। এবছর পেঁয়াজ আবাদে প্রচুর খরচ। এক বিঘা জমিতে ৬ মণ পেঁয়াজ লাগে। এক মন পেঁয়াজের দাম ৫ হাজার ৫ শত টাকা। তার তিন বিঘা জমিতে প্রায় ১ লক্ষ টাকার পেঁয়াজ ক্রয় করতে হয়েছে। এর সাথে সার, কীটনাশক, শ্রমিক খরচ দিয়ে সব মিলিয়ে এখন পযর্ন্ত ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। ঘরে তোলা পযর্ন্ত আরও ১ লক্ষ টাকা খরচ হবে। ফলন ভালো হলে তিন বিঘা জমিতে ২৪০ মন পেঁয়াজ উৎপাদিত হবে। বাজারে যে দাম রয়েছে এ দাম থাকলে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।

মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষী আজাদ বলেন, এ বছর পেঁয়াজ বীজ, জমি চাষ, সার, সেচ ও শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় ঘরে উঠানো পর্যন্ত বিঘা প্রতি মুড়িকাটা পেঁয়াজে খরচ পড়বে ৬০ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি পেঁয়াজ উৎপাদন হবে ৬০-৭০ মন। পেঁয়াজ গাছের বয়স ৪৫ দিন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে এ পেঁয়াজ ঘরে তোলা যাবে।

কৃষক বাবু বলেন, এখন পেঁয়াজ ক্ষেত নিড়ানি দিচ্ছি, স্প্রে করছি, আগাছা পরিষ্কার করছি। গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুন খরচ। এরপরও আবাদ করছি কিছু টাকার জন‍্য। ফলন যদি ভালো হয় আর বাজারে দাম থাকলে ভালো টাকা পাবো আশা করছি। সারের দামের কারণে খরচ বেশি হয়। প্রধানমন্ত্রী কৃষকের পক্ষে অনেক কাজ করছেন। কিন্তু যদি সারের দাম কমাতো, তাহলে কৃষকরা খুশি হতো।

কৃষক হারেজ, আয়ুব আলী বলেন, আমরা কৃষক। কিন্তু সরকারি কোন সহযোগিতা পাই না। শুধু শুনতে পাই সরকার অনেক কিছু দেয়, আবার যারা পায় তারা তো কৃষি কাজ করে না। কৃষি কর্মকর্তাদের বললে তারা বলে দলীয় লোক দেয় আমাদের কোন হাত নেই। আবার দলীয় লোক বলে তোমাদেরই তো দিচ্ছি। আমরা সঠিক কৃষকদের তালিকা করে প্রনোদনার দাবি জানাই।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাজবাড়ী জেলায় প্রতি বছর ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। এতে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। সারা দেশের চাহিদার ৭ ভাগের ১ ভাগ পেঁয়াজ এ জেলা থেকে পূরণ করা হয়। এ বছর জেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত ২২শত হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে আবাদ পিছিয়ে যাওয়ায় এখনো কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করছেন।

পদ্মার চরাঞ্চলের রোপনকৃত মুড়িকাটা পেঁয়াজ আগামী ডিসেম্বর মাসে বাজারে আসবে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ, পেঁয়াজ বীজ, সার, সরিষা প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য কালুখালী উপজেলাতে ২০টি আধুনিক ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। একটি ঘরে ৩০০ মন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। চলতি বছর বালিয়াকান্দি উপজেলাতে আরও নতুন ঘর নির্মাণ করা হবে। গত বছর পেঁয়াজ বীজে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ কারণে চলতি মৌসুমে কৃষকদের পেঁয়াজ বীজ ক্রয়ের সময় রশিদ সংগ্রহ করার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। কেউ প্রতারিত হলে তার ক্ষতিপূরণ আদায়ে সহায়ক হবে। এ বছরও কৃষকেরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে লাভবান হবে বলেও আশা করছেন।

এআরএস