সাতক্ষীরার আশাশুনির মাদুরের সুখ্যাতি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সেই সুখ্যাতি আজ ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে।
কারণ হিসেবে দেখা গেছে, আগে উপজেলার অধিকাংশ জমি পতিত থাকতো। সেখানে মাদুর তৈরির উপকরণ মেলে গাছ উৎপাদিত হতো। তবে এখন জমির স্বল্পতা এবং উন্নত মানের বীজ পাওয়া যায় না। আগে নদীর ধারে চড়ায় বা খালের পাড়ে মাদুর বোনার কাঁচামাল মেলে উৎপন্ন হতো এবং সেখান থেকে মেলে সংগ্রহপূর্বক মাদুর তৈরি হতো।
এক সময় আশাশুনির মাদুরের সুনাম ছিল সুদূর ভারত পর্যন্ত। তখনকার দিনের হরেক রকম বুননি মাদুর দেশ-বিদেশের পর্যটকদের প্রতি আকৃষ্ট করতো।
উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার মাদুর তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তাদের পরিবারে ছিল না কোনো অভাব-অনটন। বর্তমানে মেলে গাছের তীব্র সংকটের দরুন মাদুর শিল্পে নিয়োজিত শিল্পীরা বেকার হয়ে পড়েছে।
এখন তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকে বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। তারা মেলের অভাবে উন্নতমানের মাদুর তৈরি করতে পারছে না। উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কারণে একটি মেলেকে দুভাগ করে মাদুর তৈরি করতে হচ্ছে। ফলে উন্নত মাদুর তৈরি করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। এখন আর ভালো বুনোনির মাদুর পাওয়া যায় না। আর যদিও পাওয়া যায় তার দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
আশাশুনির মাদুর শিল্পে বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে আগামীতে মাদুর শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে অভিজ্ঞ মহলের দাবি। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন মেলে গাছ উৎপন্ন নিশ্চিত করা। আশাশুনি উপজেলায় মেলে গাছ উৎপাদনের উপযুক্ত এলাকা রয়েছে।
লবাণাক্ত মাটিতে মেলে উৎপাদন ভালো হয়। আশানুরূপ পরিকল্পিত উপায়ে মেলের চাষ করলে আশাশুনি উপজেলার মাদুরের সুখ্যাতি ধরে রাখা যাবে। এখন আশাশুনির মাদুর দেশের অন্যান্য অঞ্চলে রপ্তানি তো হয়ই না বরং এলাকার চাহিদা মেটানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর এখন যে মাদুর তৈরি করা হয় তা মোটেও উন্নতমানের নয়। আশাশুনি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বড়দল হাটে একদা হাজার হাজার মাদুর পাওয়া যেতো। শুধু মাদুরের খ্যাতির জন্য বড়দল বাজার সুখ্যাতি অর্জন করে। বর্তমানে এখানে মাদুরের বাজারের খুব করুণ অবস্থা। এলাকার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা খেজুরের পাতার তৈরি মাদুর ব্যবহার করছে মেলের অভাবে। এখন সরকারি পদক্ষেপ ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যেগ গ্রহণ করলে মাদুর শিল্পের ভবিষ্যৎ ফিরে আসবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
এআরএস