মাদারীপুরে উপবৃত্তির টাকা নিয়ে প্রতারণা, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

মাদারীপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৫:১৯ পিএম
মাদারীপুরে উপবৃত্তির টাকা নিয়ে প্রতারণা, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

মাদারীপুর সদর উপজেলায় খোয়াজপুর সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা না পাওয়া ক্ষোভ বিরাজ করছে। উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার হবে বলে কলেজ কর্মকর্তা পরিচয়ে এক প্রতারক চক্র ফাঁদে ফেলে তাদের বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থেকে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে সীমিত জ্ঞান ও তাদের সরলতার সুযোগে বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর নিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে অনেক টাকা। কথার মারপ্যাঁচে কৌশলে পিন নম্বর সংগ্রহ করে হাতিয়ে নিচ্ছে বিকাশ অ্যাকাউন্টের সব টাকা। গত এক সপ্তাহে ধরে  প্রত্যন্ত এলাকায় এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মাদারীপুর সদর উপজেলা খোয়াজপুর সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রতারিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এঘটনায় সিথী রানি নামের এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রোববার (১৯ নভেম্বর) সকালে মাদারীপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১২ নভেম্বর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি কলেজের শিক্ষক পরিচয় দিয়ে বলে উপবৃত্তির টাকা থেকে আপানর নাম বাদ পড়ে গেছে। আপনাকে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হবে। আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তা সঠিক নয়। তাই একটি বিকাশ নাম্বার দেন। সেখানে আপনাকে উপবৃত্তির টাকা দেওয় হবে। কিছুক্ষণ পরেই অজ্ঞাত একটি নাম্বার থেকে আমার মোবাইলে এসএমএস এসেছে ১০৮০০ টাকার। এক পর্যায় তিনি আমার কাছে আমার মোবাইলের পিন নাম্বার দিতে বলেন। তারপর আমি আমার মোবাইলে পিন নাম্বার দিলে আমার মোবাইলে থাকা ১৮ হাজার টাকা তার একাউন্টে চলে গেছে। কিছুক্ষণ পর একটি মেসেজ এসেছে যে আপনার উপবৃত্তির টাকা আপনার একাউন্টে দেওয়া হয়েছে। তার কিছুক্ষণ পরে আমি আমার একাউন্ট চেক করে দেখি আমার একাউন্টে টাকা তার ওখানে চলে গেছে। তারপর তাকে আমি ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা আসবে বলে মোবাইলে (০১৭০৮৪০২৮৭৬) নম্বর থেকে প্রতারক চক্রের কল আসে। বলা হয়, ‘হ্যালো আমি কলেজ থেকে বলছি। আমাদের এখানে সিকিউরিটি প্রবলেম কারণে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। আমরা আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেব। তার আগে দেখেন আপনার অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির টাকা ঢুকেছে কিনা। যদি টাকা ঢুকে থাকে, তবে ওই টাকা আপনি তুলতে পারবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আমাদের অফিস থেকে সিকিউরিটি পাসওয়ার্ড চেঞ্জ না করে নেবেন।’ তবে প্রতারণার পরপরই উল্লেখিত নম্বরটি বন্ধ করে দেয়।

এ সময় ইসমাইল নামে একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ১৫ নভেম্বর সকালেই কলেজের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাকে ফোন করেছিল। এ সময় সে সরল বিশ্বাসে ওই ব্যক্তির কথামতো সব তথ্য দিয়েছে। তথ্য না দিলে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে বলে তাকে ভয় দেখানো হচ্ছিল। এই ঘটনার কিছু সময়ের মধ্যেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা খোয়া যায় ওই শিক্ষার্থীর।

এ ব্যাপারে খোয়াজপুর সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ ফেরদাউসি বলেন, কয়েকদিন যাবত অনেক শিক্ষার্থী আমার কাছে এ সকল বিষয় নিয়ে আসছে। এ বিষয় আমাদেরকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি নোটিশ দিয়েছিল সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য। আমরা সকল শিক্ষার্থীদের এ বিষয়টি জানিয়ে ছিলাম। তারপরও তারা যে প্রতারণার শিকার হয়েছে এটা আমাদের আর করার কিছু নাই।

মাদরীপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, কোনো শিক্ষার্থী যাতে প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা না দেয়, সে ব্যাপারে আমরা শিক্ষকদের মেসেজ দিচ্ছি। শিক্ষকেরা দ্রুত বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেবেন।

মাদারীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, তাঁদের কাছে এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে এখনো কেউ আসেনি। বিষয়টি আমর জানা নেই। তবে বিকাশ গ্রাহকদের পিন নম্বর সংরক্ষণের ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এআরএস