মিয়ানমার সীমান্তে আগুনের কুণ্ডলী ও গোলার শব্দ

কক্সবাজার প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৫, ১২:১৬ এএম
মিয়ানমার সীমান্তে আগুনের কুণ্ডলী ও গোলার শব্দ
  • ফের রোহিঙ্গা ঢলের শঙ্কা

মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের জেরে নতুন করে বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তে রাখাইনে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। পাশাপাশি গোলার বিকট শব্দও শুনেছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। এতে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢল অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় নাফ নদের পাশাপাশি উপকূল এলাকায়ও টহল জোরদার করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। 

গতকাল সোমবার সকাল থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়াসহ তিনটি জায়গায় ওপারে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখেছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় সীমান্তে আমাদের টহল জোরদার রয়েছে বলে স্বীকার করেন টেকনাফ-২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ইশতিয়াক আহমেদ। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছেও খবর রয়েছে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হতে পারে। কিন্তু আমরা নতুন করে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছি না। বিশেষ করে বিজিবির তৎপরতার কারণে নাফ নদ সীমান্তে অনুপ্রবেশ বন্ধ রয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে গভীর সাগরপথে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে থাকে। আমরা সেখানেও তাদের প্রতিহত করছি।’ 

বিজিবি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অনুপ্রবেশ রোধে আমরা নাফ নদের পাশাপাশি উপকূল এলাকায় টহল জোরদার রেখেছি। যাতে নতুন করে কেউ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে।’ 

সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, কেরুণতলী পূর্বে নাফ নদের ওপারে রাখাইনে মংডুর পেরাংফুরে আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। এ ছাড়া গতকাল দুপুরে বরইতলী এলাকার ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দও পাওয়া গেছে। তবে আগের তুলনায় গুলিবর্ষণের শব্দ কমলেও কমেনি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। 

সীমান্তের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সকাল থেকে ওপারে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। তবে ঠিক ওপারে এখন কী হচ্ছে- এপার থেকে বলা মুশকিল। আমরা শুনেছি সেদেশে এখনও যুদ্ধ বন্ধ হয়নি, যার কারণে এখনও বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। গতকালও ৩৬ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। তারা আকিয়াব থেকে পালিয়ে এসেছে।’ এদিকে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৭ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের ৬৪ হাজার ৭১৮ সদস্য বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানায় সরকারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়। এরপরও এখনও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামেনি। 

মিয়ানমারে থাকা এক স্বজনের বরাত দিয়ে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবাইয়ের বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের মংডুর কয়েকটি গ্রামে থাকা অর্ধলাখ রোহিঙ্গাকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আরাকান আর্মি। আবার অনেককে ধরে নিয়ে অন্য গ্রামে নিয়ে যাচ্ছে। সেদেশে রোহিঙ্গাদের কোথাও চলাফেরা করতে দিচ্ছে না। এতে রোহিঙ্গাদের অভাবে দুর্দিন যাচ্ছে। বলতে গেলে সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলে এবার আকিয়াব থেকেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পালানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’ 

সাগরে চার দিন ভাসমানের পর গত রোববার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সৈকত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে মো. নাছির। তিনি মিয়ানমারের আকিয়াবের লম্বাদিয়ার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘সাগরে তিন দিন ভাসমান থাকার পর টেকনাফে সাগরের কিনারে পৌঁছি। আমরা বোটে ৩৬ জন ছিলাম। সেখানে আরাকান আর্মি (মগরা) রোহিঙ্গাদের ঘিরে রেখেছে। কাউকে চলাফেরা করতে দিচ্ছে না।

যার কারণে তারা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। ফলে মানুষজন অভাবে যেদিকে পাচ্ছে সেদিকে পালিয়ে যাচ্ছে।’ এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এহসান উদ্দিন বলেন, ‘অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তের নাফ নদের পাশাপাশি সমুদ্র উপকূলে আমাদের সরকারি বাহিনীগুলো তৎপর রয়েছে। নতুন করে কাউকে আর ঢুকতে দেয়া হবে না।’