নরসিংদী-১ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উদ্দেশে ‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই’ বলে বক্তব্য দেওয়া ছাত্রলীগ নেতা আহসানুল ইসলাম ওরফে রিমনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল গ্রেপ্তার করে। এরপর বিকেলে তাঁকে নরসিংদী এনে আদালতে তোলা হয়। আহসানুল নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোকন চন্দ্র সরকার। বেলা দেড়টার দিকে খোকন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আহসানুল ইসলামকে নিয়ে নরসিংদীতে ফিরছি আমরা। ফিরেই থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে তাঁকে।’
এদিকে, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আহসানুলকে নরসিংদী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আনা হয়। এরপর সরাসরি নরসিংদী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হাসানের আদালতে তোলা হয়। বিচারক আহসানুলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় আদালত চত্বরে ছাত্রলীগের প্রচুর নেতা–কর্মী ভিড় করেন।
গত বুধবার দুপুরে নরসিংদী ক্লাবে নরসিংদী-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের মতবিনিময় সভা হয়। ওই সভায় সদর আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পেটানোর হুমকি দেন আহসানুল। ওই সভায় তাঁর দেওয়া এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে ‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই, পোলাপাইন জানে কীভাবে পিটাইতে হয়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন সদরের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক। এই মামলার একমাত্র আসামি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম।
এ ছাড়া গতকাল রাতে আহসানুলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ওই আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, জানতে চান নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সদস্য নরসিংদীর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নাহিদুর রহমান নাহিদ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২৯ নভেম্বর দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে নরসিংদী ক্লাবে অনুষ্ঠিত নজরুল ইসলামের মতবিনিময় সভায় নির্ধারিত ভাষণে আহসানুল বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র চিনে না। মাইরের ওপর কোনো ওষুধ নাই। পোলাপাইনও জানে কীভাবে পিটাইতে হয়। কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র ছাত্রলীগ মানে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কীভাবে পিটাইতে হয় হে ওই আমগরে শিখাইছে, হেরে আমরা হেমনেই পিটাইমু।
এই আসনের কোনো এলাকায় তাঁদের জায়গা দেওয়া যাবে না।’ এ ছাড়া ভাষণে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেছেন তিনি। তাঁর এই বক্তব্য ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
মামলার বাদী সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলামের হুমকিতে আসনটির সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কিত হয়ে ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকতে পারেন, যা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী সুস্পষ্ট অপরাধ। তাই নির্বাচন কমিশন ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতিক্রমে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে যে হুমকি দিয়েছেন, আইনভঙ্গের শামিল। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে এমন হুমকি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই ঘটনায় গতকাল রাতে মামলা হওয়ার পর আজ দুপুরেই তাঁকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চায়। যাঁরাই এর অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবেন, তিনি যেই হোন, তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এইচআর