স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সামনে চ্যালেঞ্জে নৌকার প্রার্থীরা

আশরাফুল ইসলাম তুষার, কিশোরগঞ্জ প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৩, ০১:৩৮ পিএম
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সামনে চ্যালেঞ্জে নৌকার প্রার্থীরা

কিশোরগঞ্জে ছয়টি নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরাই এখন নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি হতে যাচ্ছেন। ছয়টি আসনের ৪টি আসনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের অন্তত ১৩ জন নেতা। যারা প্রত্যেকেই নৌকা পেতে দলীয় মনোনয়নযুদ্ধে লড়াই করেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন ৬৮ নেতা। কিশোরগঞ্জ জেলার ৬টি আসনে নৌকার মাঝি হতে মোট ৬৮ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন। বিগত তিনটি নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. মুজিবুল হক চুন্নুর কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের জন্য সর্বোচ্চ ২২ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন।

এরমধ্যে দুটি আসনে পরিবর্তন হলেও বাকি চারটিতেই মনোনয়ন পেয়েছেন পুরোনোরাই। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে একদিকে যেমন প্রার্থী, সমর্থকদের মাঝে ভোটের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে; তেমনিভাবে দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয় ইতোমধ্যে নানা প্ল্যাটফর্মে ঘোষণা দিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাজনীতির মাঠ থেকে চায়ের দোকানে পর্যন্ত শুরু হয়েছে নির্বাচনী হাওয়া। এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আনতে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিদ্রোহী তকমা দেওয়া হবে না- এমন গুঞ্জনে অনেকটা প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান দলীয় সংসদ সদস্য প্রয়াত অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপির বড় ভাই প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম, লিপির চাচাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পৌর মহিলা কলেজের প্রিন্সিপাল শরীফ আহমেদ সাদী। সৈয়দ পরিবারের তিন প্রার্থীর এই আসন ঘিরে সাধারণের আগ্রহের কমতি নেই। এ ছাড়াও কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে জাপার হয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকবেন ডা. আব্দুল হাই। জনপ্রিয় চিকিৎসক হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। এ ছাড়াও এর আগে সব দলকে টক্কর দিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাই তাকেও হিসাবে আনছেন সদর-হোসেনপুরের ভোটাররা।

‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হলে বাধা দেওয়া হবে না- এমন ইঙ্গিত আসার পর এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান এমপি সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপির বড় ভাই প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম, লিপির চাচাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু। ফলে ভোটের মাঠে বর্তমান এমপিকে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে ধারণা নেতা-কর্মীদের।

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান এমপি সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপির বড় ভাই প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম ও লিপির চাচাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর তৃণমূলে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি নেতা-কর্মীর একটি অংশের সমর্থনও রয়েছে। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপির এবার বিজয়ী হওয়া অনেকটাই কষ্টকর হয়ে পড়বে।

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দ। আসনটির বর্তমান সাংসদ সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ মনোনয়ন পাননি। এ আসনে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে থাকছেন ভোটের মাঠে। তাছাড়া বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা সাবেক এমপি আক্তারুজ্জামান রঞ্জন ও এ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন। তাই আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর বিজয় কঠিন হবে বলে ধারণা করছে সাধারণ ভোটাররা।

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসিরুল ইসলাম খান। এ আসনে বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আসনটি থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী মাঠ গরম করবেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এডিসি মেজর (অব.) নাসিমুল হক, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার গোলাম কবির ভূঁইয়া, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ ও মোহাম্মদ মাহফুজুল হক হায়দার।

কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি মো. আফজল হোসেন। তিনি টানা তিনবার এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এবার আসনটি থেকে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা ছিল ১৭ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকবেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল। তাই এ আসনেও নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে এমনটাই ভাবছে দলীয় নেতা-কর্মীরা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে কেউ জিততে না পারে, আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিলেও কিশোরগঞ্জের চারটি আসনেই স্বতন্ত্রদের দাপট অনস্বীকার্য। এমন অবস্থায় জেলার এই চারটি আসনে স্বতন্ত্র বা একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীও জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহল।

কিশোরগঞ্জের রাজনীতিবিদ আব্দুল আজিজ বলেন, এবারের নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা যায়, যাদের নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত মনে হয়েছিল, তারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। কিন্তু তাদের তৃণমূল পর্যায়ে জনবল রয়েছে। তাই নির্বাচনী ফলাফল তাদের অনুকূলে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিদ্রোহীরাও একাধিক আসন দখলে নিতে পারে।

কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বীরমুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান বলেন, নির্বাচন কেমন হবে, স্বতন্ত্রদের জন্য ইতিবাচক বা নেতিবাচক কি না এই মুহূর্তে এসব বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের চারটি আসনেই স্বতন্ত্র হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। সময়ই বলে দিবে নির্বাচনে আসলে তারা কতটা প্রভাব রাখতে পারবে।

এআরএস