শীত এলেই প্রকৃতি রুপ নেয় তার নতুন সাজে। সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেনি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় অবস্থিত পুরোনো ঐতিহাসিক রামরায় দীঘির।অতিথি পাখির আগমনে তার নতুন সাজ আরো বাড়তি সৌন্দর্য্যে যোগ হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে রামরায় দিঘিতে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে পুরো এলাকা মুখরিত। পাখি প্রেমী ও সৌন্দর্য পিপাসুরা এক ঝলক পাখিগুলোকে দেখার জন্য ছুটে আসেন দুর দুরান্ত থেকে।
শীতজুড়ে ঠাকুরগাঁওয়ের রামরায় দিঘি অতিথি পাখির আনাগোনায় মুখরিত থাকে। রামরায় দিঘির জলে পানচিল, পানকৌড়ি, পাতিহাঁসসহ নানা প্রজাতির হাজার হাজার পাখির আগমনে দিঘির সৌন্দর্য আরও ফুটে উঠেছে। পরিযায়ী এসব পাখির আগমনে পাঁচশ বছরের পুরোনো জেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তর এই দিঘির সৌন্দর্য্যে বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে।
উপজেলা শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে হোসেনগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত অপূর্ব সৌন্দর্য্যে ঘেরা এই রামরায় দীঘি। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই পুকুরের পাশেই হোসেগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ। অটো রিকশা কিংবা মোটরসাইকেলে যেতে সময় লাগে মাত্র ১০-১৫ মিনিট।
পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর ওড়াউড়ির দৃশ্যধারণের চেষ্টায় মেতেছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। কেউ কেউ আবার নৌকায় চড়ে পাখিদের ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। রামরাই দিঘির জলরাশিতে অতিথি পাখির দৃশ্য সবার নজরে ।
দর্শনার্থীরা জানান, অতিথি পাখির আগমনে এখানকার সৌন্দর্য আরও ফুটে উঠেছে। অপরূপ সুন্দর লাগছে পাখির অবাধ বিচরণ। এ যেন পাখিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করতে পেরে খুশি সবাই।
শামীম নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, রামরাই দিঘিতে প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকে অতিথি পাখি আশা শুরু করে। যা শীতের শেষ পর্যন্ত অবস্থান করে। এ পাখিগুলো অনেক দূর থেকে আসে আমরা শুনেছি। এ পাখিগুলো যখন আসে দর্শনার্থীদের আসার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ সময়ে অনেক দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসে এ অতিথি পাখির অভয়ারণ্য দেখতে। পাখিগুলো সকালে একবার দিঘিতে আসে কিছু সময় অবস্থান করার পরে বিভিন্ন বিলে চলে যায়। পরে বিকেলে আবারো আসে যা সন্ধ্যা পর পর্যন্ত থাকে। অন্ধকার হলেই তাদের বাসস্থান লোকালয়ে পুনরায় ফিরে যায়।
আফসানা নামের একজন শিক্ষার্থী জানান, আমরা বান্ধবীরা সকলে মিলে রামরায় দিঘিটি দেখতে এসেছি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এমনিতেই সুন্দর। অতিথি পাখির আগমনে এর সৌন্দর্য আরও উপভোগ্য করে তুলেছে। প্রতিবছরে পাখির আগমনে রামরায় দিঘি সৌন্দর্য যেন আরো দ্বিগুন হয়ে ওঠে।
হোসেনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান,ঐতিহাসিক প্রাচীন এই দিঘিটির উচু উচু পাহাড় ও দিঘির জলরাশি অতিথি পাখিদের আগমনে মুখরিত।আগে দিঘিটির সৌন্দর্য তেমন ছিল না কিন্তু উপজেলা প্রশাসন দিঘিটির নান্দনিক কারুকার্য স্হাপন করে আরো সৌন্দর্যের বিস্তার ঘটিয়েছেন এজন্য অনেকেই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এসব অতিথি পাখিদের যেন কেউ কোন ক্ষতি না করতে পারে এ দিকে আমার যথেষ্ট্য নজর রয়েছে। বর্তমানে এসব অতিথি পাখি দেখতে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী ছুটে আসছে। এ দিঘিটির চার পাশ জুড়ে আরোও নৈসর্গীক দর্শনীয় কাজ করতে পারলেই দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
দীঘিটির তত্তাবধানে থাকা (ইজারা নেওয়া) মৎস্য চাষী আইনুল হক জানান, অতিথি পাখির আগমনে আমরা অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তারপরও আমরা পাখিদের যেন সুন্দর একটি অভয়ারণ্য গড়ে ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখছি। কেউ যেন পাখি শিকার না করতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসন সহ আমরা সর্বদা নজরদারি করছি।
এ বিষয়ে রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন , জেলার সর্ববৃহৎ এই পুকুর দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের সুন্দর একটি অভয়ারণ্য। এসব পাখিদের কোন সমস্যা যেন না হয় আমরা সেদিকে খেয়াল রাখছি। কেউ যেন পাখি শিকার না করতে পারে সে বিষয়ে আমরা সর্বদা নজরদারি করছি। দিঘিটির নান্দনিক সৌন্দর্য বাড়াতে উপজেলা প্রশাসন বদ্ধ পরিকর।