ঝাঁকবেঁধে উড়ে বেড়াচ্ছে পরিযায়ী অতিথি পাখি। খাবারের খোঁজে ছুটে চলছে বিলের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তাদের কলকাকলিতে মুখরিত বিল। রাঙামাটির লংগদু উপজেলার লংগদু ইউনিয়নের কাট্টলী বিলে এ দৃশ্য এখন প্রতিদিনের।
স্থানীয়রা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে কাট্টলী বিলে অতিথি পাখিরা আসছে। তাপমাত্রা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পাখির সংখ্যাও। কেবল কাট্টলী বিল নয়, পাশের গাঁথাছড়া, ১০ নম্বর এলাকা, মাইনী, কালাপাকুজ্জ্যা, গুলশাখালী ও পাবলাখালী বিলেও পরিযায়ী পাখিরা আস্তানা গেড়েছে। এসব এলাকার জলাশয়গুলোতে এখন গাঙচিল, সরালি হাঁস, পাতিহাঁস, টিট্টিভ, পানকৌড়ি, চখাচখিসহ ১৫-২০ প্রজাতির পরিয়াযী পাখির দেখা মিলছে।
স্থানীয় লোকজন ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে বছরের পর বছর ধরে এই এলাকার জলাশয়ে পরিয়াযী পাখি আসছে। শীত মৌসুমে শুরুতেই এখানে পাখির মেলা বসে যায়। শীত যত বাড়ে, পাখির আনাগোনাও তত বাড়ে। শীত চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারাও চলে যায়।
কাট্টলী বিলকে পাখির অভয়াশ্রমও বলা যায়। এলাকাবাসীর প্রতিরোধের কারণে এই বিলে পাখি শিকারিদের উৎপাত নেই। গত কয়েক বছর থেকে বন বিভাগের কর্মকর্তারাও অতিথি পাখির সুরক্ষায় নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিলে শত শত জেলে মাছ ধরছেন। তাঁদের কাছাকাছি নির্ভয়ে পানিতে সাঁতরে বেড়াচ্ছে পাখির ঝাঁক। মূলত, বিলের মাছ, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ এসব পাখির খাবার।
ইঞ্জিনচালিত মাছ ধরার নৌকার চালক রফিকুল মিয়া বলেন, প্রতিদিন যাত্রী নিয়ে বিলের মাঝখান দিয়ে লঞ্চ চলে যায়। রেলিংয়ে ঝুঁকে মুগ্ধ হয়ে যাত্রীরা পাখি দেখে। অনেকে ছবিও তোলেন। এই বিলে পাখিরা নিরাপদ হলেও মাঝেমধ্যে জেলেদের জাল ও বড়শিতে আটকে কিছু পাখি মারা পড়ে বলে জানান তিনি।
পরিবেশবিদরা বলেন, প্রতিবছর শীত মৌসুমে কাট্টলী বিলসহ আশপাশের বিলগুলোতে অতিথি পাখির সমাবেশ ঘটে। এ বছরও ১০-১২ দিন ধরে পাখি আসতে শুরু করেছে। আগের তুলনায় এখন পাখি শিকার কমেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সচেতন হওয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে।
পাবলাখালী উত্তর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাহাবুব আলম সেন্টু বলেন, ‘কাট্টলী বিলসহ আশপাশের বিলগুলোতে এখন অনেক অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। পাখি শিকার না করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে প্রচারণা চালানো হয়েছে। এছাড়া আমরা সকাল-বিকেল টহল দিচ্ছি।’
এদিকে বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের হাওড় ও বিলগুলোতে শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখি আসে। মূলত, মেরু ও বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলের তীব্র শীতের হাত থেকে বাঁচতে ও খাবারের সন্ধানে এ দেশে পাড়ি জমায় পাখিগুলো। তবে পাখিগুলো যেভাবেই আসুক বাংলাদেশের মানুষের প্রাণ সঞ্চার করে প্রকৃতির অনিন্দ্য সৌন্দর্য ফুটে উঠছে।
এইচআর