টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সরিষা ফুলের হলুদ রঙে সেজেছে ফসলের মাঠ। যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। পুরো মাঠ যেন হলুদ গালিচায় ঢেকে গেছে। সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে গ্রামীণ জনপদ হয়ে উঠেছে মনোমুগ্ধকর। সেই সাথে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মৌয়ালরা। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে জন্য এসব জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স সাজিয়েছেন মৌয়ালরা। বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি বের হয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষার ফুলে ফুলে। মৌমাছি সরিষার ফুলে ফুলে উড়ে মধু সংগ্রহ করে। এতে সরিষা ফুলে সহজেই পরাগায়ন ঘটে।সরিষাক্ষেতের পাশে মৌ চাষের বাক্সস্থাপন ফলে সরিষার ফলন ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। একই সাথে মধু আহরণ করে লাভবান হচ্ছে মৌচাষিরা।
এছাড়াও সরিষা থেকেই তৈরি হচ্ছে খাঁটি সরিষার তৈল, গরুর স্বাস্থ্যকর খাবার, খৈল এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সরিষার গাছ। সরিষা চাষে খরচ কম ও বেশি লাভ হওয়ায় উপজেলা জুড়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও ব্যাপকভাবে সরিষা চাষ হয়েছে কৃষকরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে চলতি বছরে সরিষার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। মৌচাষিরা সরিষাখেতের পাশে বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। তাদের বাক্স থেকে দলে দলে উড়ে যাচ্ছে পোষা মৌমাছি, আর সংগ্রহ করছে মধু। মুখভর্তি মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা বাক্সে রাখা মৌচাকে জমা করছে। সেখানে সংগৃহীত মধু জমা করে আবার ফিরে যাচ্ছে সরিষা ক্ষেতে। ফুলে ফুলে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে সরিষার ফুলের পরাগায়নে সহায়তা করছে মৌমাছিরা। বর্তমানে মৌ চাষে প্রতি বাক্স থেকে সপ্তাহে ৬ থেকে ৭ কেজি মধু সংগ্রহ হচ্ছে। প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে ৬শ টাকায়। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত উপজেলায় সরিষা ফুলের মধু আহরণের জন্যে ৫৩২টি বাক্স বসানো হয়েছে।
মৌয়ালরা বলেন, আমরা প্রতি বছর সরিষা থেকে খাঁটি মধু সংগ্রহ করে থাকি। সরিষার মধু নির্ভেজাল হওয়ায় এ মধুর চাহিদা অনেক বেশি, খেতেও অনেক সুস্বাদু। এখান থেকে মধু সংগ্রহ করে সেগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। এখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সারা বছর আমাদের সংসার চলে।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সরিষা চাষিরা বলেন, আমাদের এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। গত বছর সরিষার ভালো ফলন হওয়ায় এবছর আবাদ বেশি হয়েছে। আমরা যেসব জমি পতিত রাখতাম সেসব জমিতেও এখন সরিষার আবাদ করেছি। এছাড়া সরিষা খেতের পাশে মৌচাক বসানোর কারণে সরিষা খেতে পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে না, এমনকি মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাম্পার ফলন হয়ে থাকে।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আরিফুর রহমান বলেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে এ বছর ৩ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় উভয় জাতের সরিষা কৃষকরা চাষ করেছে। আমরা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও সরিষার বীজ বিতরণ সহ মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সরিষা খেতের পাশ দিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য ৫৩২ টি বক্স স্থাপন করেছে মৌয়ালরা।
এআরএস