চট্টগ্রাম-৫ আসন

প্রার্থীরা সরব, ভোটাররা নীরব

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩, ০৩:১৯ পিএম
প্রার্থীরা সরব, ভোটাররা নীরব
ছবি: ফাইল

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসন চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী এলাকায় সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট আটজন। তবে আলোচনা সমালোচনায় রয়েছেন তিন প্রার্থী। সিএনজি চালিত অটোরিকশায় মাইক, সড়কের মোড়ে মোড়ে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙ্গিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় নির্বাচনি মাঠ উত্তাপের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

তিনি প্রতিবারের মতো এবারো লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনি মাঠে তার সাথে প্রচারণা করছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস গনি চৌধুরী, মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী, যুবলীগ নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ মঞ্জু ও তাদের অনুসারীরা। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের পক্ষে টানার চেষ্টা করেন তিনি।

তার মতো প্রচার-প্রচারণায় শক্ত অবস্থানে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহাজাহান চৌধুরী। তিনি এই প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কেটলি প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন। তার পক্ষে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের একাংশ নেতাকর্মীরা প্রচার প্রচারণা করতে দেখা যায়। মাঠে নৌকা প্রতীক না থাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তিনি।

এছাড়া নির্বাচনি মাঠে প্রচার-প্রচারণায় তাদের থেকে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট সৈয়দ মোক্তার আহমদ সিদ্দিকী। তিনিও এই প্রথমবারের মতো মোমবাতি প্রতীকে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনী মাঠে তার পক্ষে প্রচার প্রচারণা করছেন সুন্নি মতাদর্শ ভিত্তিক সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, ছাত্রসেনা ও যুবসেনার নেতাকর্মীরা। নির্বাচনী এলাকায় সুন্নি জনতার ভালো অবস্থান হওয়ায় তিনিও স্বপ্ন দেখছেন বিজয়ী হওয়ার। যেখানে যাচ্ছে সেখানে জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন।

বাকী পাঁচ প্রার্থী হলেন- তৃণমূল বিএনপি হতে মনোনীত প্রার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি নাজিম উদ্দীন প্রকাশ ভিপি নাজিম (সোনালী আঁশ) প্রতীক। স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি নাছির হায়দার করিম বাবুল (ঈগল) প্রতীক। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক সৈয়দ হাফেজ আহমদ (চেয়ার) প্রতীক। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি মনোনীত প্রার্থী কাজী মহসীন চৌধুরী (একতারা) প্রতীক ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টে মনোনীত প্রার্থী আবু মোহাম্মদ শামসুদ্দীন (টেলিভিশন) প্রতীক।

তারা নির্বাচনে অংশ নিলেও তাদের প্রচার-প্রচারণা বলতে কিছু ব্যানার ও পোস্টার চোখে পড়েছে। নির্বাচনি মাঠে গণসংযোগ কিংবা সভা সমাবেশ করতে তাদের তেমন একটা দেখা যায়নি। এমনকি এসব প্রার্থীদের কেউ কোনদিন দেখেননি বলেও জানান ভোটাররা। সংসদীয় এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেন চৌদ্দজন। তাদের মধ্যে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুস সালাম। আসন সমঝোতায় তিনি দলীয় সিদ্ধান্তে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ছেড়ে দেন আসনটি। নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় দলীয় নেতাকর্মীরা বিপাকে পড়েন।তাদের আশা ছিলো দীর্ঘ ৪৮ বছর পর হাটহাজারীর মানুষ এইবার নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদান করে আবদুস সালামকে বিজয়ী করবে।

এদিকে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগের বক্তব্যে ব্যারিস্টার আনিস বলেন, হাটহাজারী একটি শান্তির দ্বীপ। এখানে কোন চাঁদাবাজি, মারামারি, হানাহানি, খুনাখুনি হয়না। গোপনে কেউ কোনরকম অপকর্ম করলে যদি আমি জেনে থাকি তাহলে সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমাদের এই উপজেলায় পার্শ্ববর্তী উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে নিরাপত্তার সহিত বসবাস করছেন। আমি উল্লেখযোগ্য অনেক উন্নয়ন করছি। প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো নতুন ভবন পেয়ে, সড়ক প্রসারণ ও সংস্কার হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়েছে, সেখানে এখন আর বন্যা হয়না। তাই আমি যেখানে যাচ্ছি ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমি এইবার নির্বাচিত হলে সাড়ে পাঁচশত কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ হবে। আর ছয়মাস থেকে একবছরের মধ্যে পৌরসভার নির্বাচন হবে।

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাজাহান বলেন, এখন জোট বলতে কোন কিছু নাই জোট এখন বায়বীয় শব্দ। আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আগামী ৭ জানুয়ারি বোঝা যাবে আমি মানুষের অন্তরে কতটুকু জায়গা করে নিতে পেরেছি। সেইদিন সাধারণ মানুষ তাদের ভোটের মাধ্যমে জবাব দিবে। এবার নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রদানের পরিবেশ করে দিয়েছেন তাই জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারবে। বলা যায় বহুমুখী ঐতিহ্য মন্ডিত সুপ্রাচীন উপজেলা হাটহাজারী। উত্তর চট্টগ্রামের প্রাণ কেন্দ্র বলে পরিচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। চট্টগ্রাম শহরের অতীব নিকটে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১ ও ২নং ওয়ার্ডসহ এই উপজেলায় অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, পীর মাশায়েখ, অলি- দরবেশ, আলেম-ওলামা, কীর্তিমান ব্যক্তিদের স্মৃতি বিজরিত।

দেশের এযাবতকালের গৌরবোজ্জল সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অত্র উপজেলাবাসীর বীরোচিত ভূমিকা আলো ইতিহাসের পাতায় দৃশ্যমান। কারণ এখানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, দেশের সর্ববৃহৎ কওমী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম সেনানিবাস, কৃষি কলেজ ও হালদা নদী। স্মরণাতীতকাল হতেই শিক্ষা-দ্বীক্ষাসহ সার্বিক ক্ষেত্রে এ উপজেলা বরাবরই অগ্রসরমান।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-৫ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৩। এরমধ্যে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯০১ নারী ও হিজড়া একজন। উক্ত আসনে ১৪৬টি কেন্দ্রের ১হাজার ৬১টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক আবু রায়হান আমার সংবাদকে বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ এখনো ঠিক আছে। আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। কিছু কিছু এলাকায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও তাদের প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হয়।

এআরএস