প্রচারণার পর ভ্যান ভাড়া না দেওয়ার অভিযোগ নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৪, ০৫:৫৯ পিএম
প্রচারণার পর ভ্যান ভাড়া না দেওয়ার অভিযোগ নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে

দিনভর ভ্যানে করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হয়েছে নৌকার পক্ষে। দিনশেষে ভ্যান চালকদের ন্যায্য মজুরী দেওয়া হয়নি। মজুরী না পেয়ে মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক‘শ ভ্যান চালক। নাটোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমানের লোকজন এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।

ভ্যান চালকদের সাথে এমন আচরণ করায় নির্বাচনী এলাকার ভোটার সমর্থকদের মধ্যে ব্যপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত এটি ছিল তার শেষ বিতর্কিত ঘটনা। এরআগে প্রকাশ্যে সমর্থককে চপেটাঘাত, শিশুকে থাপ্পর মারা এবং ট্রাক প্রতীকের ভোটারদের বেঁধে রাখার মতো বিতর্কিত ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান নিজেই।

মুহুর্তেই এসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরালও হয়ে যায়। এছাড়া শিক্ষা কর্মকর্তাকে অফিস কক্ষে ঢুকে শারীরিক নির্যাতনের পর হাত কেটে নেওয়ার হুমকিও দেন এই প্রার্থীর ভাগনে।

দলীয় সূত্র মতে সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নাটোর-৪ আসনের উপনির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বদ্বতায় এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। এবারো তিনি নৌকা পেয়েছেন। তার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আসিফ আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস শোভন।

যেসব বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছে

উপনির্বাচনে জয়ি হওয়ার আগে পরে গত প্রায় আড়াই মাসে যে সাতটি ঘটনা ঘটেছে তার সবই ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এরমধ্যে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান নিজেই চারটি ঘটনার সাথে জড়িত। তিনটি ঘটনা তার নাম করে ঘটিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।

বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় এক শিশুকে পেছন থেকে থাপ্পর মারতে দেখা যায়। এরপর ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যার পর একটি আনন্দ মিছিলে মেজাজ হারিয়ে এমপি সিদ্দিক পাটোয়ারী বাম হাত দিয়ে বড়াইগ্রাম উপজেলার জুয়াড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ফেরদৌসকে থাপ্পর মারেন। থাপ্পড়ের পর মিছিলে তাল মিলিয়ে হাততালির সঙ্গে নাচতে দেখা যায় এই প্রার্থীকে। থাপ্পড়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

তার কয়েকদিন পর গুরুদাসপুরে একটি সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে প্রয়াত সংসদ সদস্যকে ফেরাউন আখ্যায়িত করে দেওয়া বক্তব্যও ব্যপক সমালোচনার সৃষ্টি করে।

এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ আব্দুল্লাহ’র ট্রাক প্রতীকে ভোট চাইলে তাকে গাছের সাথে বেঁধে রাখার হুমকি দেন সিদ্দিকুর রহমান নিজেই। ২৪ ডিসেম্বর রাতে বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মৎস্যজীবী পাড়ায় আয়োজিত নির্বাচনী সভায় সমর্থকদের ওই নির্দেশ দেন সিদ্দিকুর। এই বক্তব্যের কারণে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি নৌকার এই প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়।

এছাড়া ট্রাক প্রতীকে ভোট দিলে তাকে নিশ্চিহৃ করে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেন প্রার্থীর সমর্থক রুবেল বালি। একই ব্যক্তি সিদ্দিকুর রহমানের নাম করে ১৪ ডিসেম্বর বড়াইগ্রামের শিক্ষা কর্মকর্তাকে কার্যালয়ে ঢুকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এসময় রুবেল বালি বলেন ‘এমপির নির্দেশ আছে তোর হাতটা কেটে এমপিকে দিতে হবে’। এঘটনায় একটি মামলাও হয়।

সবশেষ ৪ জানুয়ারী প্রায় তিন শতাধিক ভ্যানে করে নৌকার প্রচারণা চালানো হয়। ৫শ টাকা করে চুক্তি করে প্রচারণা চালানো হলেও দিনশেষে প্রতিটি ভ্যান চালককে ১শ টাকা করে দেওয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ধ্যায় ভ্যান চালকরা বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে ভ্যান চালকদের থাপ্পর মারেন সিদ্দিকুরের কর্মী লুৎফর রহমান। এসব ঘটনায় নৌকার এই প্রার্থী ব্যপক সমালোচনার শিকার হচ্ছেন।

নৌকার প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান ফোন না ধরায় এসব ব্যপারে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার পক্ষে নৌকার কর্মী লুৎফর রহমান বলেন, টাকা দেওয়ার সময় একজন ছবি তোলায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তবে অন্য ব্যপারে তিনি কিছু জানেন না।

এইচআর