দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার টুকুর কাছে সাত হাজার ৫’শ ৭৪ ভোট ব্যবধানে হেরেছেন। তার পরাজয়ের নেপথ্যে রয়েছে দুর্নীতি, দলীয় কোন্দল, কিশোর গ্যাং লালন পালন, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমুল্যায়ণ, মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেয়া ও নিয়োগ বানিজ্যসহ নানা অপকর্ম বলে অভিযোগ তৃণমুল নেতাকর্মীদের।
জানাগেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দুর্গ খ্যাত বরগুনা-১ (আমতলী-তালতলী-বরগুনা সদর) আসনে সাংসদ অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু তার দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ জেষ্ঠ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকুর কাছে ৭ হাজার ৫’শ ৭৪ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন।
পাঁচ বারের এমপি শম্ভু পরাজয়ের পেছনে রয়েছে নেতাকর্মীদের জুলুম অত্যাচার, শম্ভুর একান্ত সহযোগী আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, তার উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শণ। এতে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে।
এছাড়াও গত ১৫ বছরে শম্ভু আমতলী-তালতলী মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো তিনি আমতলী-তালতলী মানুষকে তার মনোপুত নেতাকর্মীকে দিয়ে নানাভাবে হয়রানী করেছেন। তিনি বিএনপি থেকে আসা আমতলী মেয়র মতিয়ার রহমান, তার ভাই মজিবুর রহমান, আখতারুজ্জামান বাদল খাঁনসহ উপজেলা কেন্দ্রিক কয়েকজন নেতা দিয়ে লুটপাট, দুর্নীতিসহ মানুষদের নানাভাবে নির্যাতন করেছেন।
শম্ভু বিভাজনের মাধ্যমে দলের মধ্যে চরম কোন্দল সৃষ্টি করেছেন। ষড়যন্ত্র করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানী করেছেন এমন অভিযোগ আওয়ামীলীগ নেতা গোলাম মোস্তফার । পাঁচ মেয়াদে এমপি থেকেও দলের তৃণমুল নেতাকর্মীদের খোজ খবর নেয়নি। ত্যাগী নেতাকর্মীদের মুল্যায়ণ না করে তার পছন্দের বিএনপি থেকে আসা নেতাকর্মীদের দিয়ে দল পরিচালনা করেছেন বলে অভিযোগ আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির।
অবমুল্যায়িত নেতাকর্মীরাই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তার এমন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী প্রকাশ্যে তার হয়ে কাজ করলেও গোপনে তারা নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু ও স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী গোলাম ছরোয়ার ফোরকানকে ভোট দিয়েছেন।
শম্ভুর একান্ত সহযোগী আমতলী পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান ও তার ভাই মজিবুর রহমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বানিজ্য, কমিটি বানিজ্য, শালিস বানিজ্য, টেন্ডার বানিজ্য ও এমপিওভুক্তির নামে শিক্ষকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎসহ নানাভাবে হয়রানী করেছেন। উপজেলার প্রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা কমিটিতে থেকে এমপি শম্ভুর দোহাই দিয়ে নিয়োগ বানিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠান প্রধানরা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তারা উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও মেয়র মতিয়ার রহমানের লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে এমপি শম্ভুর ষড়যন্ত্রে গত ১৫ বছর ছিল আমতলী উপজেলা অশান্ত নগরী। শম্ভুর একান্ত সহযোগী মেয়র মতিয়ার রহমান দলের ত্যাগী নেতাদের অবমুল্যায়ণ, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী ও কিশোর গ্যাং লালন-পালন করছেন। তার ও তার ভাই মজিবুর রহমানের সকল অপকর্মের সহযোগীতা করতেন এমপি শম্ভুর।
অপর দিকে গত ১৫ বছরে আমতলী-তালতলী দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করেনি। দুই উপজেলার যোগাযোগের ৪৩ কিলোমিটার সড়কটি বছরের পর বছর সংস্কারে উদ্যোগ নেয়নি এমপি শম্ভু। সড়কটি সংস্কার না করায় আমতলী-তালতলীর লক্ষাধীক মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ওই ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশেই শম্ভুকে সাধারণ ভোটাররা ভোট দেয়নি।
আমতলী উপজেলার স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁন বলেন, চল্লিশ বছর আওয়ামীলীগ রাজনীতি করেছি। বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতন সহ্য করেছি। কিন্তু দল থেকে বিচ্যুতি হইনি। কিন্তু গত ১৫ বছরে সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মিথ্যা মামলা খেয়েছি।
এক সময়ের বিএনপি নেতা মেয়র মতিয়ার রহমানের সন্ত্রাসীবাহিনী আমাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। কিন্তু এমপি শম্ভুর কোন খোজ খবর নেয়নি। উল্টো মেয়রের সন্ত্রাসী বাহিনীকে রক্ষা করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, শুধু এমন আমি একাই নই, উপজেলার শত শত ত্যাগী নেতাকর্মী এমপি শম্ভু, তার দোষর মেয়র মতিয়ার রহমান ও উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। এবার সুযোগ পেয়ে জনগণ তাদের এমন কর্মকান্ডের প্রতিশোধ নিয়েছে।
আওয়ামীলীগ প্রার্থী সাংসদ অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
এইচআর