নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা

ফরিদগঞ্জে ঈগল কর্মীরা এলাকা ছাড়া

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৪, ০৬:৪৪ পিএম
ফরিদগঞ্জে ঈগল কর্মীরা এলাকা ছাড়া
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত দেলোয়ার হোসেন। ছবি: আমার সংবাদ

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। এতে দেলোয়ার হোসেন নামে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা প্রেরণ করেছেন। এছাড়া কয়েকটি বাড়িতে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে গেছেন অনেকে। নির্বাচনের রাতে ও গত মঙ্গলবার বিকালে হামলার ঘটনা ঘটে রূপসা (উত্তর) ইউপির কয়েকটি গ্রামে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান কাউছারুল আলম কামরুল হামলার ঘটনা জেনেছেন ও আহতের সঙ্গে কথা বলেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তেভোগীদের নিকটাত্মীয়রা জানিয়েছেন, বদিউজ্জামাপুর গ্রামের পাল বাড়ির দেলোয়ার হোসেন (৪০)। মঙ্গলবার বিকালে তিনি রবিউলের দোকানের পেছনে নিজ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। এসময় এসএস পাইপ ও লাঠিসোঁটা হাতে একদল যুবক অতর্কিতে তার ওপর হামলা চালায়। তাকে বেদম মারধর করে। এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পান। তার ডান হাত ও বাম পা এর হাঁটুর হাড় ভেঙে গেছে। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে আত্মীয় স্বজন চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। যথাযথ চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন।

এ ছাড়া, নির্বাচনের রাত আনুমানিক একটার দিকে হামলা হয় গাব্দেরগাঁও গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির স্বপনের ঘরে। হামলাকারীরা বাড়িতে পটকা ফোটানোর পাশাপাশি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তার দোচালা টিনের ঘরের বেড়া ক্ষতিগ্রস্ত করে। ওই সময় স্বপন (৪০) স্ত্রী আইরিন (৩৬), কলেজ পড়ুয়া ছেলে আজমির (১৮) ও সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া কন্যা সাদিয়া আক্তার ঘরে ছিলেন। পুনরায় মঙ্গলবার রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে স্বপনের বাড়িতে হামলা হয়। এতে, আতংক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। স্বপনের মা রহিমা বেগম (৭০)। স্ট্রোকের রোগী রহিমা বেগম অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে বুধবার বিকালে বাড়ির প্রবাসির স্ত্রী আঁখি (৩৫) বলেন, আতংকে আমার শিশু কন্যা অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। আজ (বুধবার) সকালে তাকে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ এনেছি। অপর প্রবাসীর স্ত্রী আসমা আক্তার (৩৬) বলেন, আমাদের জীবন ও বাড়ি ঘরের নিরাপত্তা চাই। স্বপন, ১৪ নং ফরিদগঞ্জ (দক্ষিণ) ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আমি ঈগলের নির্বাচন করেছি। তাই নৌকা প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা আমাদের বাড়িতে হামলা করেছে। তবে, তিনি নিরাপত্তা জনিত কারণে কারও নাম বলতে চাননি। মুঠোফোনে বলেন, আমি এখন আত্মগোপনে আছি।

এদিকে, দেলোয়ারের স্ত্রী সায়েরা বেগম রেবু (৩০) জানিয়েছেন, আমার স্বামীকে মেরে আধমরা করে দিয়েছে। তিনি ঈগলের পার্টি করেছেন, তাই তাকে পাশের বাড়ির নৌকার পার্টিরা মেরেছে। হামলাকারীদের নাম জানতে চাইলে তিনি আতংকে কারও নাম বলতে চাননি। তিনি জানান, আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, দেবর-ভাসুর কেউ নেই। চারজন কন্যা সন্তান নিয়ে আমার সংসার। স্বামী দেলোয়ার হোসেন চাষবাস ও একটি মুরগির খামার পরিচালনা করেন। তিনি প্রশ্ন করে বলে, এখন আমাদের কি হবে।

সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য রতন জানিয়েছেন, বদিউজ্জামাপুর ব্রিজ এর কাছে আমার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। একদল যুবক মঙ্গলবার রাতে আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছে দোকান খুলবেন না। এলাকা থেকে চলে যান। আবার দেখলে পিটানো হবে। তিনি বলেন, আমি নিরাপত্তাহীনতায় এলাকা ছেড়ে দিয়েছি। এছাড়া, মঙ্গলবার দুপুরে এলাকায় আরও কয়েক জনের ওপর হামলা করা হয়েছে। তাদের অন্তত ১০ জন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন চলে গেছেন।

এ ছাড়া, ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য ইদ্রিছ (৪৪) এর নিকটাত্মীয়গণ অভিযোগ করেছেন, সোমবার সন্ধ্যায় বাড়িতে নৌকা প্রতীকের একদল কর্মী সমর্থক ঢুকেছে। তারা মেম্বারকে খুঁজেছে। তখন, তিনি বাইরে ছিলেন। খবর পেয়ে, ইদ্রিছ মেম্বার গোপনে ঢাকা চলে গেছেন বলে তারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া, শরীফ নামের দুই যুবক এলাকা ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছেন বলে তাদের পরিবার সদস্যরা জনিয়েছেন।

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কালির বাজারে সাবেক ও বর্তমান দুই ইউপি সদস্য স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ ঈগলের কর্মীদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ইন্ধন দিচ্ছেন ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা যুবলীগের শীষ এক নেতা।  অপরদিকে উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া বাজারেও নৌকা সমর্থক এক জনপ্রতিনিধি ঈগল সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যপারে মুঠোফোনে কল দিলে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম কল রিসিভ করেননি। তবে, থানা থেকে জানা গেছে, তিনি কোনো একটি জরুরি কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।

এআরএস