লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষ। তীব্র শীতে মানুষের পাশাপাশি কাঁপছে পশুপাখিও। বেড়েছে রোগবালাই। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দুই বেলা খাবার জোগানো যাদের জন্য কঠিন, সেখানে শীতের কাপড় কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সরকারি ভাবে এখনও কোন শীতবস্ত্র পাননি অনেকেই।
উপজেলার চরকাছিয়া গ্রামের গৃহবধূ কুলছুম বেগম বলেন, আন্ডার কোন রকম আগুন জালাই গা গরম করছি। কিন্তু অবলা গরু-ছাগলগুলার কী করমো? দুইটা করি চটের বস্তা গরুর গাতে দিচ্ছি, ঠান্ডা যাছে না। ঠনঠন করি কাঁপছে। ছাগলগুলোরও রোগবালাই ধইরছে। চাহিদামতো শীতের কাপড় কেনা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকারিভাবে যদি কম্বল দিয়ে সহায়তা করা হয় তাহলে ভালো হতো।
শুক্রবার ও শনিবার উপজেলার উত্তর চরবংশী, দক্ষিন চরবংশী, চরমোহনা, চরকাছিয়া, চরজালিয়া, খাসেরহাট হায়দগঞ্জ, বামনী, কেরোয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। শীতের কারণে অনেকেই কাজে যেতে পারেননি। একটু উষ্ণতা পেতে ১০-১২ জনের দল আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
৬০ বছর বয়সী বামনী ইউপির নুর মোহাম্মদ, মনির হোসেন, আব্দুস সোবহান বলেন, রাইত পোহাইলে শীত বাড়ছে। ঠান্ডা সহ্য অয় না। এ্যালা কামাইও নাই, গরম কাপড়ও নাই। তার ওপর ঠান্ডা বাতাস হু-হু করি বেড়ার ফাঁক দিয়া ঘরে ঢোকে, তখন ছেঁড়া খ্যাতা গাওত দিয়া কোঁতক্কন থাওন যায়।
বামনী ইউপির মান্দার রাস্তার পাশে ঝড়ো হয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা যায় ৪ থেকে ৫ জনের একদল বৃদ্ধাদের। তাঁরা বলেন, ‘বাবা, ঠান্ডাতে জান বাইর হইয়া যায়। গরম কাপড় নাই, শীত এলে আঙ্গো খুব কষ্ট হয়। ঠান্ডাতে হাত-পাও পষাণ বরফ হয়ে যাচ্ছে। এ বছর এত তীব্র শীত হইলোও অনও কেউ কোন কম্বল বা শীতের কাপড় দেয়নি।
বামনী ইউপি সদস্য ইব্রাহীম হাওলাদার বলেন, ইউপি সদস্যরা সরকারিভাবে যে ২০-২৫টি কম্বল বরাদ্দ পেয়ে থাকে। তা দুস্থ লোকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এখনো অনেক হতদরিদ্র লোক শীতবস্ত্রের জন্য সকালে-বিকেলে তাঁর বাড়িতে আসছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, শীত বাড়ায় পশুপাখির সর্দি ও নিউমোনিয়া রোগ বেড়েছে। খামারি ও কৃষকদের গরু-ছাগল চট ও মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। মেঝেতে শুকনো খড় বিছানো ও গরম পানি খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শীতের সময় পশুপাখির রোগবালাই বেশি হয়। এ জন্য সাবধান থাকতে হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আসিকুর রহমান বলেন, সরকারিভাবে যে ৫ হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে, তা গত দুই দিন আগে ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদেরকে ৪’শ কম্বল দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের হতদরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য বলা হয়েছে। আরও কম্বলের জন্য জেলা প্রসাশকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
এআরএস