পৌষ মাসের শেষে ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়া আর কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের জনজীবন। শীতের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে নিজেকে গৃহবন্দি করে রাখছেন অনেকেই।
প্রায় এক সপ্তাহ যাবত কালীগঞ্জ উপজেলায় এরূপ অবস্থা বিরাজ করেছে। কুয়াশার সাদা চাদরে ঢাকা থাকছে চারিদিক। বিকেল হলেই পড়তে শুরু করে কুয়াশা। রাত বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশার মাত্রা বাড়তে থাকে আর তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ে। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চালাতে হচ্ছে যানবাহন।
ঠান্ডার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষসহ ছিন্নমূল ও চরাঞ্চলের মানুষের। ঠান্ডার কবল থেকে বাঁচতে তারা ভিড় করছেন ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানে। যাদের সামর্থ্য নেই তারা খরকুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
দিনমজুর আমিনুর রহমান জানান, আমি মানুষের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। গত কয়েকদিন ধরে ঠান্ডার কারণে আমি কাজে যেতে পারছিনা।
রিক্সা চালক নওশের আলী জানান, ঠান্ডার কারণে মানুষ ঘর থেকে বের না হওয়ার কারণে যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। আমাদের আয়ও অনেক কমে গেছে। যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে কোনমতে দিনাতিপাত করছি।
চা বিক্রেতা জিয়াউর রহমান জানান, ঠান্ডার কারণে সন্ধ্যায় দোকানে আগের মত এখন খরিদ্দার আসে না। ফলে দোকানে বেচা-বিক্রি আগের তুলানা অনেক কম হচ্ছে। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে কৃষকেরা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে করতে পারছেন না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, শৈত্য প্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির বিভাগে ঠান্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেবব্রত রায় জানান, ঠান্ডা জনিত রোগ যেমন-সর্দি-কাশি, জ্বর ও অ্যাজমা রোগী আগের তুলনায় বেশি আসছেন। যার বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক মানুষ।
শীতবস্ত্রের জন্য প্রায় প্রতিদিন উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রায় ভিড় করছেন হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষজন। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহির ইমাম জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পর্যায়ে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং তা চলমান রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায়, তীব্র শীতের এ সময়ে অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ বা সংস্থা শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসতে পারেন।
এআরএস