কুষ্টিয়া জেলাজুড়ে প্রায় তিন শতাধিক অবৈধ ইটভাটায় প্রকাশ্যে পুড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইটভাটার কালো ধূয়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হলেও ওই সব ভাটার বিরুদ্ধে এখনো তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অবৈধ ইট ভাটার কারণে ফসলি জমিরও ক্ষতি হচ্ছে বলে কৃষকেরা অভিযোগ করছে।
শুধু কুষ্টিয়াই নয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভাটা মালিকেরা অসাধু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বন উজাড় করে কাঠ নিয়ে ইটভাটায় সরবরাহ করছে। কয়লা দিয়ে কাঠ পোড়ানোর নির্দেশ থাকলেও ভাটা মালিকরা সামান্য কিছু কয়লা ভাটা চত্বরে জমা রেখে দিন রাত কাঠ দিয়ে পুড়াচ্ছে ইট। দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়ায় এ সব ভাটায় অবাধে ইট পুড়ানো হচ্ছে।
ভাটা মালিকরা জানায়, হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার রায় যতদিন না পাওয়া যাবে ততদিন পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়ায় ইটভাটা পরিচালনা করা হবে। এতে করে আইনের কোন বাধা নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কোন ভাটা চালানো যাবে না। চালালেই তা হবে অবৈধ।
এদিকে শত অভিযোগের পর কুমারখালীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ইট ভাটায় অভিযান পরিচালনা করে কয়েকটি ভাটা মালিককে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা ও কয়েকটি ড্রাম চিমনি ভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় ভাটা মালিকেরা অবৈধভাবে আর ভাটা চালাবেন না বলে ঘোষণা করেন।
৬টি উপজেলা নিয়ে গঠিত কুষ্টিয়া জেলা। দৌলতপুর, ভেড়ামারা, মিরপুর, কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী ও খোকসা এ ৬টি উপজেলায় তিন শতাধিক অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। ২ থেকে ৪টি ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র থাকলেও অন্যরা চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দেদারসে চালছে ২৬টি অবৈধ ইটভাটা। যেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে শিশুসহ শতশত শ্রমিক।
ইট তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে কৃষি আবাদি ও সরকারি জমির মাটি, পোড়ানো হচ্ছে গাছ, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। এসব ভাটায় মাটি ও ইট পরিবহনে ব্যবহার করা হচ্ছে শতাধিক অবৈধ শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলি ও স্টারিং গাড়ি। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, কেউ প্রাণ হারাচ্ছে আবার কেউ হচ্ছেন পঙ্গু।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, এ উপজেলায় একটি ভাটা ছাড়া বাকি ২৬টি ইটভাটা অবৈধ। এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছেন দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ইটভাটাগুলোর লাইসেন্স না থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
সাদিপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের আবাদি জমির চারিপাশে ইটভাটা গড়ে তোলায় সেখানে আর কোন ফসলের আবাদ করতে পারছেন না।
দৌলতপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন জানান, দীর্ঘদিন ইটভাটার ধোয়ায় বাতাসে কার্বণ বৃদ্ধি পায়। এবং তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও নানা ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এবিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, এসব ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। ফসলি জমি নষ্ট করে এসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে। পরিবেশ বিনষ্টকারী এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারি প্রয়োজন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র কেমিস্ট হাবিবুল বাশার বলেন, এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওবায়দুল্লাহ জানান, ভাটাগুলোতে গাছের গুড়ি বা কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে আমার জানা নেই। আমরা দ্রুত অভিযান পরিচালনা করবো।
এআরএস