অবৈধভাবে সেচ প্রকল্পের মাটি কাটায় অভিযান

‘আমরা কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে কাজ করছি’

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৪, ০৪:০১ পিএম
‘আমরা কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে কাজ করছি’

প্রকাশ্যে দিবালোকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা জিকে ক্যানেলের মাটি কাটা-উত্তোলন ও ভরাটের মহোৎসব চললেও কর্তৃপক্ষ রয়েছে নিরব। এই অবৈধভাবে মাটি কাটার কারনে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কোটি টাকার ভূসম্পত্তি। এই ঘটনা জেলা প্রশাসককে জানানোর পর মঙ্গলবার সকালে উক্ত খালে স্থানীয় প্রশাসন ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু জিকে খালে অভিযান পরিচালনা করেন। 

অভিযানে একজনকে আটক করা হলেও বাকিরা পালিয়ে যায়। তবে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান নির্বাহী কর্মকর্তা। এদিকে জিকে কতৃপক্ষকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প (জিকে) ক্যানেলে জিকে ৩ নম্বর ব্রিজের সন্নিকটে মাটি কেটে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যক্তিরা পাশেই সরকারি জায়গা ভরাট করে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের করে চলেছে। 

জনৈক অসাধু ব্যবসায়ী ফারুকসহ আশেপাশের আরো অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা পানি উন্নয়নের বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যক্তিগতভাবে সরকারি জায়গা ভরাট করে কোটি কোটি টাকা মূল্যমানের ভূসম্পত্তি আত্মসাতে উঠে পড়ে নেমেছে ওই অসাধু মহলটি।

রাজনৈতিক পরিচয় এর সূত্র ধরে ও নিজেদেরকে বিভিন্ন বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের নিকটাত্মীয় বলে পরিচয় দিয়ে বেআইনিভাবে কাজটি করে যাচ্ছে তারা। সরেজমিন পরিদর্শনকালে এই প্রতিবেদক সোমবার সকালে উক্ত স্থানে গেলে মাটি কাটতে ও ভরাট করতে দেখা যায়। মাটি কাটতে ব্যস্ত নিয়োগকৃত দিন মজুরেরা প্রতিবেদককে জানান, ফারুক নামের উক্ত এলাকারই একজন ব্যবসায়ী তাদেরকে এখানে এই কাজে নিয়োগ করেছেন এবং নিয়মিত হাজিরা প্রদান করছে। 

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ফারুকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মাটি কাটা ও ভরাটের দায় স্বীকার করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এসে দেখে গেছে তারা কিছু বলেনি। কাজটা বেআইনি হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ বেআইনি হচ্ছে। আমরা সবাইকে ম্যানেজ করে কাজ করছি।

এ ব্যাপারে গঙ্গা- কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে তার দায়িত্ব এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট আপনারা যোগাযোগ করুন। উক্ত কর্মকর্তার পরামর্শ মোতাবেক পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুষ্টিয়া এর নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিবেদক কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বেআইনীভাবে মাটি কর্তন করে সরকারি জায়গা দখল করে ভরাট করার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। সেই সাথে গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের ক্যানালের মাটিকাটা ও ক্যানেলের উপরিভাগের জায়গা জমি জবরদখলের  বিষয়গুলো খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে মর্মে জানান জেলা প্রশাসক। তারই ফলশ্রুতিতে এই ভ্রাম্যামান অভিযান পরিচালনা করলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এইচআর