ফেনীতে চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ২৪২ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করা হয়েছে। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার ও ভালো বীজ সরবরাহ হওয়ায় সবজি আবাদ বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত শীত মৌসুমে জেলায় সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ২৫০ হেক্টর। চাষ হয়েছিল পাঁচ হাজার ৩৫১ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ৩৮ হাজার ৩০ মেট্রিক টন সবজি। কৃষিকাজে সম্পৃক্ত ছিল সাড়ে ২৩ হাজারের মত কৃষক।
চলতি মৌসুমে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৩৬ হেক্টর। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজার ২৪২ হেক্টর জমিতে। আরও ২০০ হেক্টর ভূমিতে আবাদের পরিকল্পনা আছে কৃষকদের। চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন সবজি। এ চাষাবাদে সম্পৃক্ত রয়েছে ২৫ থেকে ২৮ হাজার কৃষক।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রযুক্তির প্রসার ও ভালো মানের বীজ সরবরাহ থাকায় প্রবাসী অধ্যুষিত অগ্রসরমান এ জনপদে বাড়ছে সবজির আবাদ। চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন অনেক প্রবাস ফেরত, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শিক্ষিত বেকার যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এরমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষাবাদ করে ভালো আয়ও করছেন অনেকে। এদের একজন জেলার ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা ফুলগাজীর পূর্ব দরবার পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা বিদেশ ফেরত আবু তাহের বাহার।
তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর প্রবাসে কাটিয়ে বাড়িতে এসে অবসরের সময়টুকু কাটাচ্ছেন ফসলের মাঠে। নিজের ১০ একর জমির মধ্যে পাঁচ একরে চাষাবাদ করেছেন ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, গোল আলু, কাঁচামরিচ, বেগুনসহ নানা পদের বাহারি সবজি।নিজের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে নিয়েছেন এলাকার আরও কয়েকজনকে। কৃষি কাজ করে প্রতিমাসে আয় করছেন অর্ধলক্ষাধিক টাকা।
একই উপজেলার আবুল খায়ের ভূঞা মিন্টু। তিনি ছিলেন, ঠিকাদার, এখন পুরোদস্তুর কৃষক। চলতি শীত মৌসুমে ১২ শতক জমিতে চাষাবাদ করেছেন উন্নত মানের টমেটো। তেল উৎপাদনের জন্য ছয় শতক জমিতে চাষ করছেন সরিষা। এর আগে গত কয়েক বছর আরবের ফল শাম্মামসহ হলুদ তরমুজ চাষেও কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন এই কৃষক।
জানা যায়, সবজি আবাদের এসব প্রকল্পে কৃষক উদ্যোগতাদের সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সাধারণ দিন মজুরদেরও। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা কাজ করছেন ফেনীর ফসলের মাঠে। আয় করছেন দৈনিক ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ফেনী জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে শীতকালীন সবজি চাষ আগের চেয়ে বেড়েছে। ধানের আবাদের পর এখন আর কোনো জমিই পতিত পড়ে থাকছে না।
কৃষকদের সবজির আবাদে ভালো ফলনের জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগ থেকে সার-বীজসহ পরামর্শ সেবাসহ বিভিন্ন সহায়তা দিচ্ছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।
ফুলগাজীর ধলিয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনোজ কান্তি দেব জানান, সব ধরনের সহায়তা নিয়ে নিযমিত কৃষকদের পাশে থাকেন তারা।
ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম বলেন, প্রযুক্তির প্রসারে কৃষিতে উৎপাদন বেড়েছে বহুগুণে। কৃষিতে প্রণোদনা ও সহজ শর্তে ঋণসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়লে এ জেলায় সবজির আবাদ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন ও কৃষক ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
এআরএস