কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলায় চলতি বছর সরিষার চাষে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে কৃষি অফিস। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে সরিষার চাষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে এবার জেলায় ১৫ হাজার ১৪৭ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।
গত বছর কুষ্টিয়া জেলায় ১১ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়। এ বছর প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ বেশী হয়েছে। সরিষা চাষ বৃদ্ধি করতে সরকার চাষিদেরকে সহায়তা প্রদান করেছে। কোনো রোগবালাই না হলে প্রতিবিঘা জমি থেকে এবার ৩ থেকে ৪ মণ হারে সরিষা উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।
চলতি মৌসুমে সরিষা চাষের জন্য ৩০ হাজার ৬’শ চাষিদের মাঝে ৩০ হাজার ৬’শ বিঘা জমিতে সরকার তৈল ফসলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য সরিষা প্রণোদনা প্রদান করেছে। সরকারি প্রণোদনা পেয়ে চাষিরা খুবই খুশি হয়েছে।
প্রণোদনা মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়া সদরে ১১ হাজার ৯৩০ জন চাষি, খোকসা উপজেলায় এক হাজার ৯১০ জন, কুমারখালীতে ৪ হাজার ৯৭০ জন, মিরপুরে ৫ হাজার ৫০জন, ভেড়ামারায় এক হাজার ২’শ জন ও দৌলতপুরে ৫ হাজার ৫৪০ জন চাষি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার তথ্যমতে, জেলার ৬টি উপজেলার দৌলতপুরে ২ হাজার ৫৮৫ হেক্টর, ভেড়ামারায় ৫৫৮ হেক্টর, মিরপুর ২ হাজার ৭০৫ হেক্টর, সদরে ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর, কুমারখালীতে ২ হাজার ৭৫২ হেক্টর এবং খোকসা উপজেলায় ৯৯৭ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেয়ে চাষিরা খুশি হয়ে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়িয়েছে বলে চাষিরা জানায়।
দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নেই চাষ হয়েছে সরিষা। এর মধ্যে বেশি চাষ হয়েছে ফিলিপনগর, মরিচা, রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ চরে। শুধু এসব এলাকাতেই ৬২১ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদরের শহরতলি বাড়াদী, কমলাপুর, জিয়ারখী, পাটিকাবাড়ী এলাকায় সরিষা চাষ বেশী হয়েছে। কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নে, যদুবয়রা ও শিলাইদহ চর এলাকাসহ সব উপজেলার বিভিন্ন মাঠে সরিষার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এ বছর সরিষা চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের সরিষা চাষি তারিফ ইসলাম জানান, সরকারি সহায়তা নিয়ে এবার এক বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। গাছ ভালো হয়েছে। ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন। তুলনামূলক কম খরচ আর অল্প সময়ে উৎপাদন হওয়ায় উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা চাষে ঝুঁকছেন এখানকার চাষিরা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাড়াদী গ্রামের চাষি ময়েজ মন্ডল জানান, আমন ধান কাটার পর বোরো আবাদের আগ পর্যন্ত জমি ফেলে না রেখে এই সরিষা চাষ করেছেন। এতে বাজারের বাড়তি দামে ভোজ্যতেল কেনার প্রয়োজন পড়বে না।
মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের মুকতার হোসেন নামের অপর এক চাষি বলেন, ‘সরিষার এবার ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মূলত এটি একটা বাড়তি ফসল হিসেবে আমরা চাষ করি। বাজারে প্রতি মণ সরিষা ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত এখন বিক্রি হচ্ছে।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি সহায়তা ও কৃষি অফিসের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির কারণে দিনে দিনে সরিষার চাষ বাড়ছে। আমরা চাষিদের সব সময় রোগবালাই প্রতিরোধে পরামর্শ দিচ্ছি।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, সরকার তেল আমদানির উপর নির্ভরশীল না হওয়ার জন্য চাষিদেরকে প্রণোদনা প্রদান করছে। যাতে করে সরিষা চাষে চাষীদের আরো আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক চাষিদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন। যার কারণেই চলতি মৌসুমে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা করেন।
মিরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, চাষিরা আগের চষে এখন খুবই সচেতন। সরকারি সাহায্যে পেয়ে চাষীরা সরিষা চাষে আরো আগ্রহ বাড়িয়েছে। আমরা কৃষি অফিস থেকে চাষিদেরকে বিভিন্ন সময়ে পোকা মাকড় সহ বিভিন্ন রোগ বালাই যাতে সরিষার ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এবার সরিষার ফলন ভালো পাওয়া যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ পরিচালক ড. আবুল হায়াৎ বলেন, সরিষা একটি অর্থকরী ফসল। কুষ্টিয়াতে যেভাবে সরিষা চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে আগামীতে কুষ্টিয়ার তেলের চাহিদা মিটিয়ে বাহিরে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। শুধু তেলই নয় সরিষার খৈল, পান বরজ, পুকুরের মাছ চাষে এবং ফলজ ও বনজ বৃক্ষে ব্যবহার করা হয়। এতে করে চাষীরা খৈল বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছে।
এআরএস