বাবা মারা যাওয়ার পরে অভাবের কারণে সংসার চলছিল না পূর্ণিতাদের। কষ্ট করে মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়েছেন তার মা। মায়ের আশা ছিল মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করাবে কিন্তু সে গুড়ে বালি হয়েছে পূর্ণিতার স্কুল কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে। ফরম পূরণের ফি জমা দিলেও প্রবেশপত্র তৈরি হয়নি বলে পূর্ণিতা চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।
শনিবার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারি ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি কান্দাপাড়া গ্রামের মৃত সন্তোজ বাছার ও মনিকা রানি বাছার মেয়ে পূর্ণিতা বাছার। পূর্ণিতা বিঝারি ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গুরুরাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্কুল সূত্রে জানা যায়, পূর্ণিতা বাছারের বাবার মৃত্যুর পরেও তার মা মনিকা বাছার অনেক কষ্ট করে পূর্ণিতা ও তার বড় বোন পূর্ণিমা বাছারকে পড়াশোনার জন্য পঞ্চপল্লী গুরুরাম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছিল। তারাও ঠিকভাবে পড়াশোনা করছিল। গত বছর বড় বোন পূর্ণিমা বাছারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও পারিবারিক কারণে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। বড় মেয়ে পূর্ণিমা এসএসসি পরীক্ষায় বসতে না পাড়ায় পরিবারের ইচ্ছে ছিল ছোট মেয়ে পূর্ণিতা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো একটি কলেজে ভর্তি হবে। নিয়ম অনুযায়ী যথা সময়ে পরীক্ষার ফরম পূরণ ফিও জমা দিয়েছিল সে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ ভুলক্রমে পূর্ণিতা বাছারের ফরম পূরণ না করে তার বড় বোন পূর্ণিমা বাছারের ফরম পূরণ করে ফেলেছে। এ বছর এসএসসি পরীক্ষা শুরুর একদিন আগে (বুধবার) পূর্ণিতা বাছার স্কুলে প্রবেশপত্র আনতে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তার বড় বোন পূর্ণিতা বাছারের প্রবেশপত্র দেয় তাকে। প্রবেশপত্র হাতের পাওয়ার পরদিনই পরীক্ষার তারিখ হওয়ায় পড়াশোনার চাপে পূর্ণিতা বাছার প্রবেশপত্রের সকল তথ্য খেয়াল করে দেখেনি। পরীক্ষায় অংশ নিতে পরদিন পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার পর কেন্দ্রের সচিব পূর্ণিতাকে অন্যজনের প্রবেশপত্র নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার অভিযোগে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন।
এরপর কাঁদতে কাঁদতে পূর্ণিতা বাছার বাড়িতে চলে যায়।
ভুক্তভোগী পূর্ণিতা বাছার বলেন, আমার বাবা নেই। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছিলাম। পরীক্ষার ফিও জমা দিয়েছি। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে আমি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি। আমার যে ক্ষতি হয়েছে, তার কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না। স্যারদের বলার পর তারা বলেছে, আগামী বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে।
পূর্ণিতার মা মনিকা রানি বাছার বলেন, অভাবের সংসারে মেয়েরা আমার অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। বড় মেয়ে পূর্ণিমার উপবৃত্তি আনতে গিয়েছিলাম স্কুলে। স্কুল কর্তৃপক্ষ তখন জানিয়েছিল পূর্ণিমার নামই নেই স্কুলে। এরপর পূর্ণিমা আর স্কুলে যায়নি। নাম যেহেতু নেই, সেহেতু আমরা পূর্ণিমার ফরম পূরণের টাকাও তখন জমা দেইনি। ছোট মেয়ে পূর্ণিতার ফরম পূরণের টাকা জমা দিয়েছিলাম। এখন প্রবেশপত্র এসেছে পূর্ণিমার। তখন তো বলেছিল, নামই নেই স্কুলে। এখন তাহলে পূর্ণিমার ফরম পূরণ হলো কীভাবে? স্যারদের ভুলের কারণেই আমার মেয়ে পূর্ণিতা পরীক্ষা দিতে পারল না। এই ঘটনা স্যারদের জানানোর পর, তারা আমার বাড়িতে এসে বলে গেছে সাংবাদিক বা কোথাও যেন বিষয়টি না জানাই। আমরা গরীব মানুষ, ওদের বাবা নেই। কাকেই বা জানাবো?
বিষয়টি নিয়ে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক গৌতম দাস বলেন, পূর্ণিমা ও পূর্ণিতা দুই বোন। তাদের দুই জনের নাম কাছাকাছি হওয়ায় এই ভুলটি হয়েছে। তাছাড়া একেবারে শেষ সময়ে আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। যদি দুই দিন সময়ও পেতাম, তাহলে শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে যেভাবে হোক, বিষয়টির সমাধান করতাম। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকরা মিলে পূর্ণিমার বিষয়টি নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী এক বছর তার পড়াশোনার সকল ব্যয়ভার স্কুল কর্তৃপক্ষ বহন করবে, যাতে সে আগামী বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে।
শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শামসুন নাহার বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। প্রবেশপত্রের বিষয়টি সম্পূর্ণ স্কুল কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসের বিষয়। বিষয়টি যদি আগে জানতে পারতাম, তাহলে ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা গ্রহণে চেষ্টা করতে পারতাম।
ইএইচ