প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে ডাক্তার পদায়ন দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গ্রামের মানুষ যেন ভোগান্তি ছাড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারে এজন্য সরকারের এই উদ্যোগ।
কিন্তু বরিশাল সদর উপজেলার এক চিকিৎসক পদায়নকৃত কর্মস্থলে যান মাসে চার দিন এতে ব্যাহত হচ্ছে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য। সরকারের নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো চিকিৎসক হুরায়রা খান সানজানা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ১ জুন ডা. হুরায়রা খান সানজানাকে জাগুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে পদায়ন করে স্বাস্থ্য বিভাগ। পদায়নের পর থেকে তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
ডা. হুমায়রা খান সানজানা`র এ কর্মকাণ্ডে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজর মানুষ।
জাগুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউবি) আফরোজা সুলতানা বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার ডা. হুমায়ারা খান সানজানা মাসে চার দিন আসেন। বাকি সময় সদর স্বাস্থ্য অফিসে থাকেন।
জাগুয়া ইউনিয়নের ভ্যানচালক ইমরান হোসেন বলেন, শুনেছি এই হাসপাতালে বড় ডাক্তার আছে। কিন্তু কোনোদিন তো তাকে চোখে দেখলাম না। আমরা হাসপাতালে গেলে তাকে পাই না। হাসপাতাল থেকে কিছু ওষুধ দেয় তা নিয়ে চলে আসি।
একই গ্রামের রফিক উদ্দিন বলেন, সরকার আমাদের সেবা দেয়ার জন্য তাকে এই হাসপাতালে নিয়োগ করেছে। কিন্তু উনি ঠিক মতো আসেন না। আমাদের সেবা দেয়ার জন্য সরকার তাকে টাকা দেয়। কিন্তু আমাদের সে সেবা দেন না।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকার সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেয়ার অঙ্গিকার করলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতার কারণে তা ভেস্তে যেতে বসেছে। কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং সঠিক তদারকির অভাবে রুগ্নদশা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির। চিকিৎসাসেবা না দিয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ওষুধ নিজেরাই হজম করছে বলেও অভিযোগ গ্রামবাসীর।
জাগুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেদায়াতুল্লাহ খান জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন ডাক্তার আছে কিন্তু সে ঠিক মতো আসে না। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। বহুবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কর্ণপাত করেন না। এলাকার দরিদ্র মানুষ সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অভিযুক্ত ডা. হুরায়রা খান সানজানা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসে নানা রকমের কাজ থাকে সেগুলো পালন করতে গিয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়মিত সময় দেওয়া হয় না।
বরিশাল সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুন্নবী তুহিন বলেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক মাসে এতোদিন অনুপস্থিত থাকার কথা না। যদি কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ পেলে বিষয়টা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, চিকিৎসক অনুপস্থিতি থাকার বিষয়টা আমার জানা ছিল না। কেউ আমাকে অবহিত করে নাই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিধি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এআরএস