রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলাধীন বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি আম বাগানে গিয়ে দেখা যায়, আমের মুকুলের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশ। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই দেখা যাচ্ছে সারি সারি আম বাগানের গাছে গাছে সোনালী রঙ ধারণ করতে শুরু করেছে পরিস্ফুটিত মুকুল। শীতের বিদায় বেলায় আম চাষিরাও গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে।
এবার আমগাছে ভালো মুকুল আসাতে আমের ভালো ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সাফছড়ি এলাকার আমচাষী ধনঞ্জয় তঞ্চঙ্গা, সুজন তঞ্চঙ্গাসহ বেশ কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বিগত বছরের তুলনায় এবার মাস খানেক আগে থেকেই আমের মুকুলের দেখা মিলেছে। এছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর গাছে ব্যাপক পরিমাণ মুকুল এসেছে। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতি যদি এরকম ভালো থাকে তবে আমের ফলন অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক ভালো হবে বলে তারা আশা করছেন।
চাষিরা আরও জানান, দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় পার্বত্য অঞ্চলে আম রূপালী জাতের চাহিদা অনেক বেশি।
গতবছরেও তারা আম রূপালী বিক্রয় করে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন বলে জানান। তাছাড়া আম রূপালী চাষ করতে যেমন আনন্দ তেমনি খেতেও খুব সুস্বাদু। তাই তারা প্রত্যেকেই বাগানে আম রূপালী গাছের চাষ বেশি করে আসছেন বলে জানান।
তবে কয়েকজন চাষি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার পরিচর্যা খরচ তাদের অনেক বেশি বহন করতে হচ্ছে। বিশেষ করে কীটনাশক, সেচের খরচ আর শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়াতে আম চাষিদের দুশ্চিন্তা বেড়ে গেছে। এতে আমের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
এদিকে শিক্ষকতার পাশাপাশি বেশ কয়েকবছর ধরে শখের বসে আমবাগান করে আসছেন মধু মঙ্গল তঞ্চঙ্গা। তিনি জানান, তার বাগানে রাইখালী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে সংগ্রহ করা দেশীয় বারি-১, বারি-২, বারি-৩, বারি-৪ এবং বারি-৮ জাতের আম গাছ রয়েছে। যেই গাছগুলোতে বর্তমানে ভালোই আমের মুকুল দেখা দিয়েছে। তবে গতবছর তিনি ভালো ফলন না পেলেও এবার মুকুল অনুযায়ী ভালো ফলনের আশা করছেন। এদিকে তার বাগানে দেশীয় জাতের পাশাপাশি বিদেশি জাপানি জাতের বিখ্যাত এবং মূল্যবান মিয়াজাকি আম গাছের চারাও রোপণ করেছেন বলে জানান। এছাড়া আমেরিকান রেড আইভরী জাতের আম গাছের চারাও তার বাগানে রয়েছে বলে জানান। সবকিছু ঠিক থাকলে এইবছর তিনি প্রতিটি আম গাছে ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করছেন।
এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ইমরান আহমেদ জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাপ্তাই উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত এসব আমের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন জেলায় কাপ্তাই থেকে ব্যাপক পরিমাণ আম বিক্রয় করা হয়। এছাড়া বর্তমান সময় পর্যন্ত আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো থাকায় আমের ভালো ফলন হবে বলে আমরা আশা করছি। বিশেষ করে বর্তমানে আমের মুকুল থেকে গুটি আসার আগ পর্যন্ত এইসময় গাছের বেশ পরিচর্যা করতে হয়। কাপ্তাই উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে আমচাষীদের বিভিন্ন পরামর্শ এবং পর্যবেক্ষণ করে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, এইবছরেও কাপ্তাইয়ের আম চাষিরা আমের ভালো ফলন পাবে এবং সেইসাথে লাভবান হবে।
ইএইচ