যশোর পৌরসভার দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডে হুমকির মুখে পড়েছে খুলনা বিভাগের একমাত্র মুরগির বাচ্চা সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান যশোর মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্পর্শকাতর এই খামারের বায়োসিকিউরিটি। ফলে মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে খামারের তিন-চার হাজার মুরগি ও মুরগির বাচ্চার।
সরকারি এই খামারের পক্ষ থেকে একাধিকবার লিখিত আবেদন করে ঝুঁকিমুক্ত করার কথা বলা হলেও আমলে নিচ্ছেন না পৌর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন সরকারি খামারের কর্মকর্তারা।
খুলনা বিভাগের একমাত্র সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারটি যশোরের শংকরপুরে অবস্থিত। এ ধরনের খামার অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুমুক্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালান কর্তৃপক্ষ। উঁচু প্রাচীর দিয়ে বাইরের প্রাণিকে ভেতরে প্রবেশ বন্ধ করেন। এমনকি বাইরে থেকে কোনো ব্যক্তি এ ধরনের খামারে প্রবেশ করতে চাইলে গেট থেকে জীবাণুনাশক দিয়ে পা ধুয়ে ঢুকতে হয়। তা না হলে তৈরি হয় নানা ধরনের ঝুঁকি।
অথচ এই ধরনের স্পর্শকাতর খামারের প্রাচীর ঘেঁষে কন্টেইনার ডাস্টবিন স্থাপন করেছে যশোর পৌরসভা। যা দায়িত্বহীনতার নামান্তর। এই ডাস্টবিনে আশপাশ এলাকার লোকজনের ময়লা আবর্জনা ফেলার কথা। অনেকেই ডাস্টবিনে ময়লা, আবর্জনা, খাবারের উচ্ছিষ্ট, মরা পশু-পাখি ফেললেও কেউ কেউ ডাস্টবিনের বাইরে এসব ময়লা আবর্জনা ফেলছেন। মরা হাঁস, মুরগিসহ অন্যান্য প্রাণি কুকুর, বিড়াল ও কাক মুখে করে মুরগির খামারের ভেতরে এসব নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে খামারের মধ্যে নানা ধরনের জীবাণু ছড়িয়ে পরে বায়োসিকিউরিটির বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। ফলে ঝুঁকিতে পড়ছে সরকারি এই খামারে থাকা চার-পাঁচ হাজার মুরগি ও মুরগির বাচ্চা । তৈরি হচ্ছে মৃত্যুর আশঙ্কা।
দীর্ঘদিন এ ধরনের দায়িত্বহীন কার্যক্রম চলার পর মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের উপপরিচালক মো. বখতিয়ার হোসেন লিখিতভাবে পৌরসভায় আবেদন করেছেন স্পর্শকাতর খামারের পাশ থেকে কন্টেইনার ডাস্টবিন সরানোর জন্য। একাধিকবার লিখিত আবেদন করলেও বিষয়টির প্রতি কোন গুরুত্ব দিচ্ছেন না পৌর কর্তৃপক্ষ।
পৌরসভার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ডাস্টবিনের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব কনজারভেন্সি শাখার। আর এই শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুন্ডু। তিনি মুরগি খামারের উপপরিচালকের আবেদন করার বিষয়টি জানেন না। অথচ সর্বশেষ, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মেয়র বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়। সেই আবেদনেরও কোনো হদিস নেই। একইসাথে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি প্রায়ই উপস্থাপন করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। কিন্তু তাতেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
খামার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত কন্টেইনার ডাস্টবিন সরিয়ে বায়োসিকিউরিটি রক্ষা করা না গেলে খামার বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
উপপরিচালক মো. বখতিয়ার হোসেন বলেন, ভেতরের বায়োসিকিউরিটি ঠিক রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই অবস্থায় বাইরে থেকে যদি হুমকির সৃষ্টি করা হয় তাহলে ভেতরের চেষ্টা তেমন কোনো কাজে আসবে না। পৌরসভাকে গুরুত্বের সাথে উপলব্ধি করতে হবে এটি সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। একই সাথে এই খামারের স্পর্শকাতর দিক উপলব্ধি করতে হবে।
পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুন্ডু বলেন, মুরগি খামার যে আবেদন করেছে তা আমরা জানি না। আর একবার আবেদনের পরে যখন হয়নি তখন আরেকবার করেনি কেন? সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান কেন বারবার আবেদন করবে? পৌরসভার কি কোনো দায়িত্ব নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে তর্ক জুড়ে দেন তিনি। এছাড়াও উত্তম কুন্ডুর বিরুদ্ধে রয়েছে দায়িত্ব অবহেলা পৌর নাগরিকদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ। একপর্যায়ে বলেন, যখন জানতে পেরেছি তখন দু’একদিনের মধ্যে ডাস্টবিনটি সরানোর চেষ্টা করা হবে।
ইএইচ