শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় মুসাফির নামের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১৩ মার্চ) রাত ৮ টায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটেছে।
অভিযুক্ত ডাক্তার হাসপাতালটির মেডিকেল অফিসার শরীফ উর রহমান। এর আগেও তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগে একাধিক রোগীর মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে।
নিহত মুসাফির (৩ মাস) শরীয়তপুর পৌরসভার চরপালং গ্রামের রাজিব শেখ ও রুবিনা বেগম দম্পত্তির ছোট ছেলে।
শিশুটির স্বজন ও হাসপাতালের নার্সদের সূত্রে জানা যায়, মুসাফিরকে ঠান্ডা ও পেটে সমস্যা নিয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করেই মুসাফির অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তার স্বজনরা নার্স ডাকতে গেলে নার্সের রুম থেকে আয়া পাঠানো হয়।
আয়া এসে মুসাফিরকে অক্সিজেন লাগিয়ে দিয়ে যায়। আয়া কেন অক্সিজেন লাগাবে বিষয়টি শিশুটির মা জানতে চাইলে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন আয়া। এরপর নার্স এসে শিশুটিকে দেখলে নার্স রোগীর স্বজনদের ডাক্তার ডাকার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর স্বজনরা দায়িত্বরত চিকিৎসক শরীফ উর রহমানকে একাধিকবার ডাকলেও তিনি আসেননি।
এদিকে রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে গেলে নার্স প্রথমে ওয়ার্ডবয় ও আয়াকে পাঠান ডাক্তার ডাকতে। এরপরেও ডাক্তার না আসলে নার্স নিজেই যান ডাক্তারকে ডেকে আনতে। কিন্তু ডাক্তার নার্সকে পরামর্শ দেন অক্সিজেন খুলে তার কাছে নিয়ে আসতে। রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে গেছে বলে নার্স অক্সিজেন খুলতে অপারগতা প্রকাশ করলেও চিকিৎসক শরীফ উর রহমান শিশু মুসাফিরকে শেষ পর্যন্ত দেখতে যাননি। এরপর শিশু মুসাফির হাসপাতালেই মারা যায়।
নিহত মুসাফিরের মা রুবিনা বেগম বলেন, অনেকবার বলার পরেও স্যালাইন লাগিয়ে দিয়ে যায় নাই। এরপর আমার বাবুর অবস্থা খারাপ হলে আমি আবার গেলে একটি ওষুধ লিখে দিয়েছে, ওই ওষুধ খাওয়ানোর পরে আমার মুসাফির আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর আমি আবারও নার্সকে জানালে আয়া এসে অক্সিজেন লাগিয়ে দিয়ে গেছে।
এরপরও আমার মানিক সুস্থ না হলে আবারও গিয়েছি। এরপর নার্স আমাকে ডাক্তার ডাকার পরামর্শ দিয়েছেন। একাধিকবার ডাক্তার ডাকলেও ডাক্তার আর আসেনি। আমার মানিক আমাকে রেখে চলে গেছে। হাসপাতালে এসেও চিকিৎসা পেলাম না।
শিশুটির বাবা রাজিব শেখ বলেন, ডাক্তারকে আমি একাধিকবার ডাকলেও সে আমার কথায় গুরুত্ব দেয়নি। পরে নার্সকে জানালে নার্স আয়াকে পাঠিয়েছে। এরপরও ডাক্তার না আসায় নার্স নিজে গিয়ে ডেকেও ডাক্তার আনতে পারেনি। আমার বাচ্চা মারা গেছে। ডাক্তার আসলে আমার বাচ্চা মরত না। সদর হাসপাতাল রোগী মেরে ফেলে। আমি চাই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যেন আর কোনো বাবা সন্তান হারা না হয়।
হাসপাতালটির সিনিয়র স্টাফ নার্স সীমা বৈদ্য বলেন, আমি দেখলাম যে বাচ্চার পেট ফুলে গেছে। রোগীর স্বজনদের ডাক্তার ডাকার পরামর্শ দিয়েছিলাম। স্বজনদের ডাকে ডাক্তার সাড়া না দেওয়ায় আমি ওয়ার্ড বয়কে দুইবার পাঠিয়েছিলাম, এরপরও ডাক্তার আসেননি। এরপর আমি আয়াকে পাঠিয়েছি, ডাক্তার আয়াকে বলেছিলেন অক্সিজেন খুলে তার কাছে নিয়ে যেতে।
বাচ্চার অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমি অক্সিজেন খুলতে রাজি হইনি। এরপর আমি নিজেই ডাক্তার ডাকতে যাওয়ার পর ডাক্তার আমাকে একই কথা বলেছেন। এরপর শুনেছি বাচ্চার স্বজনরা কান্না করছেন। ততক্ষণে শরীফ স্যারের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে, এরপর অন্য ডাক্তার আসলে তিনি এসে দেখেছেন বাচ্চাটি মারা গেছে। ডাক্তার আসলে হয়ত কোনো ওষুধ দেওয়া যেত।
বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য ডাক্তার শরীফ উর রহমানকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। এর আগেও আপনার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ছিল, এই বিষয়ে জানতে চাওয়ার পরেও তিনি বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা।
ডাক্তার শরীফ উর রহমানের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মিতু আক্তার বলেন, আমি হাসপাতালের অন্য স্টাফদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছি। তার বিরুদ্ধে এর আগেও একই অভিযোগ পেয়েছি। আমরা একটি তদন্ত কমিটি করব, তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এইচআর