মাত্র ৪ লাখ টাকা খরচ করে ফিলিপাইন জাতের আখ আবাদ করে বছর না ঘুরতেই ১৫ লাখ টাকার বেশি আয় করার স্বপ্ন দেখছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহের কৃষি উদ্যোক্তা কৃষক সোহেল রানা।
নিজের ৪ বিঘা জমিতে ফিলিপাইনের উন্নত জাতের আখের চারা রোপণ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি।
সোহেলের আবাদ দেখে অনেকেই ঝুঁকছেন এ জাতের আখ আবাদে। ভাগ্যবদলে ক্রিকেটার থেকে সে এখন একজন সফল চাষি।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের উত্তর কাটদহ বাবুপাড়া এলাকার আবুল কাশেম’র ছেলে সোহেল রানা। এক সময় পেশায় ছিলেন একজন ক্রিকেট খেলোয়াড়।
পোড়াদহের খেলার মাঠ কাঁপিয়ে পরবর্তীতে খেলেছেন ঢাকার সব নামিদামি ক্লাবে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে খেলা ছাড়তে হয় সোহেল রানার। এরপর কুষ্টিয়ায় ফিরে এসে সিমেন্ট ও হার্ডওয়ারের ব্যবসা শুরু করেন।
ব্যবসার পাশাপাশি কয়েক বছর আগে মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মাঠে নিজেদের প্রায় তিন একর (৯বিঘা) জমিতে মিশ্র ফল বাগান গড়ে তোলেন। তিন একর জমির মধ্যে দুই একর জুড়ে শরিফা (মেওয়া)ফলের আবাদ করেন।
পাশাপাশি এক একর জমিতে উন্নত জাতের গ্যান্ডারি, কলা এবং কাচাভা আবাদ করেন। ইতোমধ্যে সোহেল রানা প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মেওয়া ফল বিক্রি করেছেন।
আর এখন রয়েছে ফিলিপাইন জাতের আখ। প্রায় ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার আখের চারা রোপণ করেন তিনি। ইউটিউবে আখ চাষের নিউজ দেখে সোহেল রানা মেওয়া ফলসহ আখ আবাদে আগ্রহী হন।
সেই থেকে নিজের জমিতে রোপণ করেন আখের চারা। এতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ৪ লাখের সামান্য বেশি। মিরপুর কৃষি অফিসের উদ্যোগে সোহেলের জমিতেই একটি ট্রাইকো কম্পোস্ট জৈব সারের ছোট্ট প্লান্ট করে দিয়েছে। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে জৈব সার। এসব জৈব সার জমির ফসলে ব্যবহার করছেন তিনি। ফলে উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে সোহেলের। এখন প্রতি পিচ আখ তিনি বিক্রি করছেন ৩০-৪০ টাকায়।
স্থানীয় রস ও আখ ব্যবসায়ীরা জমি থেকে কিনে নিচ্ছেন আখ। তারা আবার এসব আখ ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন। রমজান মাসে এসব আখ আরও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে বলে মনে করেন সোহেলসহ অন্য ব্যবসায়ীরা। তার এই মিশ্র ফল বাগানে কাজ করে এলাকার অনেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, আমার এ বাগানের বয়স এখন প্রায় সাড়ে তিন বছর। এ বাগানে অন্যান্য ফলের পাশাপাশি ফিলিপাইন জাতের আখ আবাদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যার খরচ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ টাকা। আখ বেশ ভালো হয়েছে। দামও বেশ ভালো পাচ্ছি। আশা করি এই আখ বিক্রি করে এক বছরেই আমার আয় হবে ১৫ লাখ টাকা। এবার ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে আখের আবাদ আরো বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় কৃষক মুনতাজ আলী বলেন, এ ধরনের আবাদ এলাকায় নেই। সোহেল রানার ফিলিপাইন জাতের এ আখ আবাদ দেখে আমরা উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আমরাও আখের আবাদ করার কথা ভাবছি। এই আখ যেমন নরম তেমনি রসালো। অনেকেই প্রতিদিন তার ক্ষেতে আসেন আখ দেখতে ও খেতে। রসালো আখ খেয়ে খুশি ভোক্তারা।
আখ ও রস ব্যবসায়ী লিটন আলী বলেন, আমি পোড়াদহ রেলগেটে আখ ও রসের ব্যবসা করি। সোহেল রানার আবাদকৃত ফিলিপাইন জাতের এ আখ যেমন নরম ও তেমনি রসালো। তার জমি থেকে এই আখ কিনে নিয়ে যায়। এ আখ নরম ও রস বেশি হওয়ায় লাভ পাওয়া যায় বেশি। মিষ্টি এই আখের রসের চাহিদাও অনেক।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সোহেল রানা এ এলাকায় একজন শিক্ষিত ও আদর্শ কৃষক। কৃষিতে যত শিক্ষিত তরুণরা আসবে ততই কৃষি উন্নত এবং সমৃদ্ধ হবে। সোহেলের আখ চাষ দেখে অনেক কৃষক আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরাও তাকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
এআরএস