শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুসাফির নামে এক শিশু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দায়িত্বরত চিকিৎসক শরীফ উর রহমানকে একাধিকবার ডাকতে গিয়েছিলেন শিশুটির স্বজন ও নার্সসহ অন্যান্যরা। কিন্তু এরপরেও শরীফ উর রহমান ওই শিশুর চিকিৎসা সেবা করতে আসেননি। হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরেও চিকিৎসা না পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় শিশু মুসাফিরের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ডা. শরীফ উর রহমানকে কুড়িগ্রামের রৌমারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুর ১২ টার দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান আমার সংবাদকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল বুধবার (২০ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. হারুন অর রশীদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ডা. শরীফ উর রহমানকে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত ডা. শরীফ উর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগেও একই অভিযোগে রোগীর মৃত্যুর খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল।
সদর হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে শরীয়তপুর পৌরসভার চরপালং গ্রামের রাজিব শেখ ও রুবিনা বেগম দম্পতির তিন মাস বয়সী শিশু মুসাফিরকে ঠান্ডা ও পেটে ব্যথা জনিত অসুস্থতার কারণে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভর্তি করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করেই মুসাফির অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তার স্বজনরা নার্স ডাকতে গেলে নার্স এসে শিশুটিকে দেখে রোগীর স্বজনদের ডাক্তার ডাকার পরামর্শ দেন। নার্সের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর স্বজনরা দায়িত্বরত চিকিৎসক শরীফ উর রহমানকে একাধিকরা ডাকলেও তিনি আসেননি।
এদিকে রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে গেলে নার্স প্রথমে ওয়ার্ডবয় ও আয়াকে পাঠান ডাক্তার ডাকতে। এরপরেও ডাক্তার না আসলে নার্স নিজেই যান ডাক্তারকে ডেকে আনতে। কিন্তু ডা. শরীফ উর রহমান নার্সকে পরামর্শ দেন অক্সিজেন খুলে তার কাছে নিয়ে আসতে। রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে গেছে বলে নার্স অক্সিজেন খুলতে অপারগতা প্রকাশ করলেও চিকিৎসক শরীফ উর রহমান শিশু মুসাফিরকে শেষ পর্যন্ত দেখতে যাননি। এরপর শিশু মুসাফির সন্ধ্যা পৌনে ৮টার দিকে হাসপাতালেই মারা যায়।
এরপর গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান হাসপাতালটির গাইনি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হোসনে আরাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এরপর গতকাল বুধবার (২০ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. হারুন অর রশীদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে কুড়িগ্রামের রোমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডা. শরীফ উর রহমানের শাস্তি পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রদান করবেন।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে মেডিকেল অফিসার ডা. শরীফ উর রহমানের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এরপর তাকে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। শিশুর মৃত্যু তার অবহেলা জনিত কারণে হয়েছে, এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এআরএস