‘আমার মন্ত্রী সচিব আছে, জেলা এক্সসিএন (এলজিইডি জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী) আমার গোনা লাগে না, বোঝোসনাই ব্যাপারটা, তোরা কারা? তোদের পড়াশোনার যোগ্যতা কি? গেট লস্ট।’ রাস্তার কাজের অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী নাবিল আহমেদ সাংবাদিকদের এভাবেই শাসান।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা এলজিইডির একটি রাস্তার কার্পেটিংয়ের চলমান কাজের অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ডামুড্যা উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী নাবিল আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের গায়ে হাত তোলেন এবং ধাক্কা মারেন।
জানা যায়, ডামুড্যা উপজেলার একটি পিচঢালাই রাস্তার কার্পেটিং এর চলমান কাজে নিম্নমানের ও পুরোনো উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন তথ্যর ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ডেইলি স্টার, সমকাল, বাংলা টিভি’র প্রতিনিধিসহ সরেজমিনে আরো দুটি গণমাধ্যমের সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
ডামুড্যার খেজুরতলা নামক স্থানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রাস্তার কার্পেটিংয়ের জন্য বালু, ডাস্ট ও পাথরের সমন্বয়ে মেশিনের মাধ্যমে বিটুমিন মেলানো হচ্ছে। এ মেশিনের পূর্বপাশে রাখা হয়েছে রাস্তা থেকে তুলে আনা পুরানো কার্পেটিংয়ের পাথর এবং পশ্চিম পাশে রাখা হয়েছে পুরোনো সেতুর ভাঙা পাথর।
রাস্তার কার্পেটিংয়ের জন্য এ ধরনের পুরোনো উপকরণ এখানে কেন রাখা হয়েছে, গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নে প্রকৌশলী নাবিল আহমেদ গণমাধ্যমকর্মীদের উপর চড়াও হন। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, ‘তোরা ইঞ্জিনিয়ারিং এর কি বুঝস, তোরা কারা? তোদের পড়াশোনার যোগ্যতা কি? গেট লস্ট।’ এ সময় সমকালের সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন বলেন, ‘এভাবে কেন কথা বলছেন, আর আপনি গেট লস্ট বলার কে। এই কথা বলার পরে প্রকৌশলী নাবিল আহমেদ সোহাগ খানকে গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দেন।’
এ সময় ডেইলি স্টারের প্রতিনিধি প্রকৌশলীকে বলেন, আপনি গায়ে কেন হাত দিচ্ছেন, আর তুই তোকারি কেনো করছেন। এই কথার জবাবে তিনি বলেন কই হাত দিয়েছি, বরং তুই আমার গায়ে হাত দিয়েছিস। আর তুই কে? তোর পরিচয় কি? তোরে গাইরালাইমানে ( গাইরালাইমানের অর্থ হচ্ছে পুঁতে ফেলা), আমার গায়ে কেন হাত দিলি তোরে গাইরালাইমানে। এই কথা বলে তিনি ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকের গায়ে হাত তোলেন এবং ধাক্কা দেন । এই সময় ঠিকাদার মোহাম্মদ ইয়ামিন প্রকৌশলীকে বাধা দেন।
এইসময় সময় প্রকৌশলী আরো বলেন, তোদের পরিচয় কি, আমার শ্বশুর বাড়ির আত্মীয় টিভি চ্যানেলের চিফ রিপোর্টার, তার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও হাত রয়েছে। এখনি তোর পরিচয় বল, তারে সব জানাচ্ছি।
এলজিইডির জেলা এক্স ছি এন (জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী) আমাদের পরিচয় জানেন কথার জবাবে তিনি বলেন, আমার মন্ত্রী-সচিব আছে, জেলা এক্সেন আমার গোনা লাগে না, তারে আমি গুনি না বোঝোসনাই ব্যাপারটা।
পুরাতন উপকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে, ঠিকাদার রাজন ব্যাপারী বলেন, পুরাতন যেইসব উপকরণ রাখা হয়েছে, সেইগুলো আমার নয়। অন্য ঠিকাদার রেখে গেছেন।
এই বিষয়টি ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাসরীন বেগম সেতু বলেন, বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। তিনি কেন এই ধরনের ব্যবহার করেছেন আমি জানিনা। আমাকে সময় দিন তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করব কেন তিনি এই ধরনের ব্যবহার করেছেন।
আপনাকে ডামুড্যা উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার গোনেন না, পুরাতন কার্পেটিং এর উপকরণ রাস্তায় ব্যবহার করতে পারবে কিনা এবং তথ্য জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে বাজে আচরণ করেছেন বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে, শরীয়তপুর জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম বলেন, কারপেটিংয়ের পুরাতন মাল নতুন করে বিটুমিনে মেলানোর কোন সুযোগ নেই। কার্পেটিংয়ের পুরোনো মাল রাস্তা থেকে উঠানোর পর রোলার দিয়ে রাস্তাতে মিলিয়ে ফেলতে হবে। এটা পাশেও রাখা যাবে না। মনে হয় কোন অসৎ উদ্দেশ্যে রেখেছেন।
তিনি বাজে ব্যবহার কেন করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে তার সাথে কথা বলব। আমি তাকেসহ আপনাদের একসাথে ডাকবো। আর তিনি যদি দোষী হয়ে থাকেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এআরএস