ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ প্রাপ্ত সুন্দরবন ৷ আর এই সুন্দরবনের মধু সেরা হিসাবে পরিচিত৷ প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে বন বিভাগ সুন্দরবনের এই মধু আহরণের অনুমতি দিয়ে থাকেন৷ তবে প্রতিবছরই মৌয়ালরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন ৷ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সুন্দরবন থেকে মধু সাবাড় হয়ে যায়৷ সাতক্ষীরা রেঞ্জের পশ্চিম সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় এখন সুন্দরবন থেকে চুরি করে সংগ্রাহ করা এসব মধু চড়া দামে বিক্রি করা হয়৷ সুন্দরবনের প্রথম মধুই সেরা যেগুলো খালিসা ফুল থেকে মৌমাছি আহরণ করে থাকে ৷ যাকে ফুলপট্টি মধু বলা হয় ৷
সুন্দরবন থেকে মধু আহরণে প্রতিবছর বন বিভাগের একটি লক্ষ্যমাত্রাও থাকে। তবে প্রতিবার মৌসুম শুরুর আগেই সুন্দরবনে চুরি করে মধু সংগ্রহ করে থাকে একশ্রেণীর চোরাকারবারিরা৷ বনবিভাগের গড়িমসিতে সুন্দরবনের মধু চুরি হয়ে যাচ্ছে ৷
কয়েকজন পেশাদার মৌয়াল জানান, অনুমতি পাওয়ার আগেই মধু সাবাড় হয়ে যায় ৷ পরে বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সরকারি কর পরিশোধ করে লাভের আশা করা যায় না ৷ চিহ্নিত মধুচোরারা সুন্দরবন থেকে মধু চুরি করে চড়া দামে বিক্রি করলেও মাথা ব্যথা নেই বনবিভাগের ৷
এদিকে বনবিভাগের কর্মকর্তারা চুরি করে মধু সংগ্রহ ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে ৷ তাঁরা জানান, লোকবল সংকটের কারণে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় মধু চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।
বন বিভাগের তথ্যমতে, প্রতিবছর ১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দুই মাস মধু আহরণের মৌসুম। এ জন্য প্রতিবছর ১ এপ্রিল সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনে `মধু আহরণ উৎসব` শুরু হয়ে থাকে ৷
২০২২ সালে ৪১১টি পাস নিয়ে ২ হাজার ৮৯৮ জন মৌয়াল ১ হাজার ৪৪৯ কুইন্টাল মধু এবং ৩৩৪ দশমিক ৭০ কুইন্টাল মোম আহরণ করেন। এ থেকে রাজস্ব আয় হয় ৩২ লাখ ৭৪ হাজার ৭০০ টাকা।
২০২৩ সালে ৩৬৫টি পাস নিয়ে ২ হাজার ৪৫০ জন মৌয়াল ১ হাজার ২২৫ কুইন্টাল মধু এবং ৩৬৭ দশমিক পাঁচ কুইনন্টাল মোম আহরণ করেন। এ থেকে রাজস্ব আয় হয় ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা।
চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৫০০ কুইন্টাল মধু এবং ৪৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী, নীলডুমুর, নাতিনাখালি, মুন্সিগঞ্জ, গাবুরা, কদমতলা এলাকা ঘুরে বেশ কয়েকটি স্থানে সুন্দরবনের মধু বিক্রি করতে দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামান, বক্স, বাচ্চা খোকন, রুস্তম, তোরাব, রফিকুল ও মাকছুদের নেতৃত্বে ১৫-২০টি দল মার্চ মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে সুন্দরবনে ঢুকে মধু চুরি করে আহরণ করার অভিযোগ উঠেছে ৷ তারা এলাকায় এনে ওই মধু চড়া দামে বিক্রি করছে৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুড়িগোয়ালিনীর মধু বিক্রি কালে এক মৌয়াল জানান, তিনি ১০ বছর ধরে মৌসুমে সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ করছেন। তাঁরা চারজন ১৬ মার্চ সুন্দরবনে ঢুকে দুই মন মধু আহরণ করেছেন।
আরও জানান, মধু কম পাওয়া গেলেও বেশি দামে এবং খলিসা ফুলে ফুলপট্টি মধু পাওয়া যায় ৷ প্রতি কেজি মধু ১ হাজার ২শ থেকে ৩শ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এসব চাক থেকে এপ্রিলের ২য় ও ৩য় সপ্তাহে মধু আহরণ করলে প্রতি চাকে সর্বনিম্ন পাঁচ কেজি করে মধু বেশি পাওয়া যেত।
এআরএস